Advertisement
E-Paper

মেয়েকে নিয়ে ঘরছাড়া এইচআইভি আক্রান্ত বধূ

এইচআইভি আক্রান্ত এক বধূ ও তাঁর দেড় বছরের মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। ১১ জানুয়ারি এ বিষয়ে এগরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বছর তিরিশের ওই বধূ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫১

এইচআইভি আক্রান্ত এক বধূ ও তাঁর দেড় বছরের মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। ১১ জানুয়ারি এ বিষয়ে এগরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বছর তিরিশের ওই বধূ। অভিযোগ, স্বামীর থেকেই এইচআইভি সংক্রমণ ঘটেছে তাঁর শরীরে। ২০১৪ সালে রোগ গোপন করে বিয়ে করেছিলেন তাঁর স্বামী। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁর শরীরে সংক্রমণের বিষয়টি জানা যায়।

অবশ্য ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে এগরা হাসপাতালে নিরোগ শিশুর জন্ম দিয়েছেন ওই বধূ। তারপর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু শারীরিক, মানসিক অত্যাচার চলত তাঁর উপর। এমনকী সংক্রমণের বিষয়ে পাড়া-প্রতিবেশীকেও জানিয়ে দিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ফলে কোনও উৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হত না তাঁকে।

চলতি বছর ৯ জানুয়ারি পাশের গ্রামে বাপের বাড়ি চলে আসেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী, ভাসুর, জা ও শাশুড়ি আমাকে আর মেয়েকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অপরাধ আমি এইচআইভি আক্রান্ত।” ওই বধূ জানিয়েছেন সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকেই তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাচ্ছেন। চিকিৎসকরা তাঁর স্বামীকে রক্ত পরীক্ষা করাতে বললেও রাজি হননি তিনি। রক্ত পরীক্ষার কথা বলতে গেলেই কপালে জুটত মারধর। এমনকী তাঁর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পরিবার ও প্রতিবেশীরা।

স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় থানায় গিয়েছিলেন ওই বধূ। ওই সংস্থার সম্পাদক হাজি ইস্তিয়াক হোসেন দাবি করেছেন, “ঘটনার সঙ্গে শুধু শ্বশুরবাড়ি নয়, জড়িত স্থানীয় বাসিন্দারাও। ওই বধূ গ্রামের মানুষের কাছেও হেনস্তা হচ্ছেন। এমনকী অভিযোগ দায়ের করায় আমাকে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ বধূর বাবা বলেন, ‘‘ন’দিন পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না। আমার দিন মজুরি আর চায়ের দোকানের রোজগারে মেয়ের চিকিৎসা, নাতনির ভরণপোষণ অসম্ভব। তার উপর এই অত্যাচার। কী করে কী হবে জানি না।’’ বৃহস্পতিবার ওই বধূর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে অবশ্য খোঁজ মেলেনি তাঁর স্বামীর। জানা গিয়েছে, আগে খিদিরপুর বন্দরে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। এখন আর সে কাজ করেন না। তাঁর মা আরতি দাস বলেন, “ছেলে অসুস্থ। বাড়ি নেই। কোথায় গিয়েছে জানিনা।’’ তবে ওই বধূর ভাসুর এক ধাপ এগিয়েছেন। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “বৌয়ের জন্যই আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তারপরই ভাইয়ের বৌ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। এখন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।” কিন্তু আপনার ভাই কেন রক্ত পরীক্ষা করাতে চান না? প্রশ্নের উত্তর এড়িয়েছেন তিনি।

অন্য দিকে ওই বধূর বাপের বাড়ির গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী মানসী গিরি বলেন, “আমি নিজে ওই মহিলার স্বামীকে রক্তপরীক্ষা করানোর কথা বলেছিলাম। কেউ কর্ণপাত করেননি।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। বিষয়টি জানেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও। এগরার মহকুমাশাসক রজতকান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, জেলাশাসকের নির্দেশে তিনি পদক্ষেপ করছেন। আজ, শুক্রবার তাঁর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে ওই বধূকে। পুলিশকেও নির্দেশ দিয়েছেন বধূ নির্যাতনের মামলায় শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

hiv AIDS Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy