ভক্ত: দোলের আগে ইসকনে বিদেশি। নিজস্ব চিত্র
পথ সাকুল্যে পাঁচ কিমির কম-বেশি। অথচ, ওইটুকু রাস্তা অতিক্রম করতে যেন অনন্তকাল কেটে যায়। এই পথ মায়াপুরের ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী মার্গ বা চেনা নামে মায়াপুর রোড। নবদ্বীপের গঙ্গার পূর্ব পাড়ে হুলোর ঘাট থেকে সিধে চলে গিয়েছে বামুনপুকুর বাজার। যেখান থেকে পথ গিয়েছে বেঁকে জেলাসদরের দিকে। দোলের এই সময়ে সেই পথেই হুমড়ি খেয়ে সারা বিশ্বের কৃষ্ণভক্তের দল। দোল উৎসবে নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা করতে আসেন দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ। প্রায় পনেরো দিন ধরে তাঁরা নবদ্বীপ মায়াপুরের পথে পথে সংকীর্তন সহযোগে পরিক্রমা করেন। ছোট-বড় নানা মাপের সেই পরিক্রমা মায়াপুরের পথে নামলেই তালগোল পাকিয়ে যায় যান চলাচল ব্যবস্থা। তখন পরিক্রমাকারী ভক্ত এবং সাধারণ পথচারী উভয়েরই নাভিশ্বাস ওঠে।
এমনিতেই প্রবল যানবাহনের চাপ ওই রাস্তায়। জানা গিয়েছে, হুলোর ঘাট থেকে কৃষ্ণনগর-সহ একাধিক রুটে দিনে প্রায় ডজন দুই বাস চলাচল করে। গড়ে পনেরো মিনিট অন্তর ওই বাসগুলি নিয়মিত যাতায়াত করে। সেই সঙ্গে মায়াপুরে বারো মাস এখন পর্যটকেরা আসেন বড় বড় বাস এবং ছোট-বড় নানা রকমের গাড়ি নিয়ে। প্রায় ছ’শো টোটো চলে ওই পথে। সেই সঙ্গে চলে রিকশ ভ্যান, লছিমনের মতো যাত্রীবাহী গাড়ি।
ফুট বিশেক চওড়া রাস্তার দু’পাশে কম-বেশি পাঁচশো অস্থায়ী দোকানে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানীরা। তাঁদের পসরায় চাপে কোথাও কোথাও রাস্তার প্রস্থ কমে হয়েছে দশ থেকে বারো ফুট। এমন পথ দিয়ে যখন হাজার হাজার মানুষের মিছিল যাতায়াত করে, তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে। দোলের সময় যত এগিয়ে আসে, ততই বাড়ে বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের পরিক্রমার সংখ্যা। ফলে মায়াপুর ক্রমশ যেন অগম্য হয়ে ওঠে।
সোমবার সকালে বাড়ি থেকে মিনিট তিনেক দুরত্বে রাস্তার উল্টো পিঠে খবরের কাগজ কিনতে গিয়ে কুড়ি মিনিট আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা গৌরহরি দাস। তিনি বলেন, “মায়াপুরে সব সময়ই ভিড়। তবে দোলের সময়টা অবর্ণনীয়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতি দিন সকালে এবং বিকালে কয়েকশো রাজমিস্ত্রি ও মজুর সাইকেল নিয়ে নবদ্বীপে কাজে যান ও ফেরেন। সেই সঙ্গে মায়াপুরের ইসকনের কর্মী এবং সেবকদের সাইকেল বা বাইকে যাতায়াত। হুলোর ঘাটে থেকে বেশ কিছু ভ্যান মাল পরিবহণ করে দিনভর। সেই সব মিলিয়ে এই সঙ্কীর্ণ রাস্তার উপরে চাপের বহর মারাত্মক। দোলের সময়ে সেই চাপেই কার্যত ভেঙে পড়ে যান চলাচল ব্যবস্থা।”
স্থানীয় এক আশ্রমের প্রধান তৎপর মহারাজ বলেন, “চৈতন্য মহাপ্রভুর ধামে মানুষ তো আসবেনই। তাঁদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। পরিক্রমার সময়ে আরও বেশি করে সেই ব্যবস্থা হওয়া জরুরি। সবার আগে দরকার রাস্তা চওড়া করা। তা হলেই সব সমস্যা মিটে যাবে।”
এই প্রসঙ্গে মায়াপুর বামুনপুকুর দুই নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কল্পনা সরকার বলেন, “সকলেই পেটের ভাতের জন্য ওই অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। ফলে, চাপ একটু বেশি। তবে পূর্ত দফতরের অধীন ওই রাস্তাটি চওড়া করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। মাপজোকও হয়েছে। আগামী দোলে হয়তো এমন অসুবিধা হবে না।”
অন্য দিকে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন আছে ওই পথে। ইতিমধ্যে ওই পথে টোটো, বাস-সহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy