Advertisement
E-Paper

দিশি মদে টান, চাঙ্গা চোলাই

মুখ ঢেকেছে বাংলা মদের। পোয়া বারো চোলাইয়ের! বাতিল নোটের ধাক্কায় বাংলা বাজারে বাংলা মদের বিক্রি কমে যাওয়ায় ফের রমরমা চোলাইয়ের ব্যবসায়। কারবারিরাও স্বীকার করছেন, বছর দুয়েক যাবৎ মার খাচ্ছিল চোলাইয়ের ব্যবসা।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪

মুখ ঢেকেছে বাংলা মদের। পোয়া বারো চোলাইয়ের!

বাতিল নোটের ধাক্কায় বাংলা বাজারে বাংলা মদের বিক্রি কমে যাওয়ায় ফের রমরমা চোলাইয়ের ব্যবসায়। কারবারিরাও স্বীকার করছেন, বছর দুয়েক যাবৎ মার খাচ্ছিল চোলাইয়ের ব্যবসা। তার জেরে গাঁ-গঞ্জের বহু ভাটি শুকনোই পড়ে ছিল। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আবার ওই সব ভাটিতে আগুন জ্বলছে, জুটছে খদ্দেরও।

গত মাসে যে দিন নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কাকতালীয় ভাবে সেই ৮ নভেম্বরই এই রাজ্যে দেশি ও বিলিতি মদে দাম বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করে আবগারি দফতর। মদ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দেশি মদের ৬০০ এমএল বোতলের দাম ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা এবং বিলিতি মদের দাম বাড়ানো হয় গড়ে ১৭ থেকে ২০ শতাংশ। বিয়ারেরও দাম বেড়েছে গড়ে ১৫ টাকা। এর ফলে ১০ নভেম্বর থেকে গোটা রাজ্যে মদের বিক্রিবাটা এক ঝটকায় ৪০ শতাংশ কমে যায়। বারগুলো মদের বরাত কমিয়ে দেয়, দেশি মদের দোকানিরাও ‘মাল’ তোলা বন্ধ করে দেন। এক দিকে খুচরোর আকাল, অন্য দিকে পানীয়ের দর বৃদ্ধি— এই দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে মদের ব্যবসা কার্যত টালমাটাল।

দেশি মদ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘অল বেঙ্গল এক্সাইজ লাইসেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যোৎ সাহা বলেন, ‘‘এই ক’দিনে ১০ শতাংশ বাজার উঠলেও কোনও দোকানে পর্যাপ্ত মাল নেই। কারণ কারও হাতেই টাকা নেই। ব্যাঙ্কে গেলে চার-পাঁচ হাজার ঠেকাচ্ছে। মাল তুলব কী করে?’’ প্রদ্যোৎবাবু জানাচ্ছেন, এই ব্যবসায় কোনও ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর নেই। যাঁরা তৈরি করেন, ব্যবসায়ীরা সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে কিনে নেন। তাই দেশি মদের পুরো ব্যবসাটাই চলে নগদে। হাতিবাগানের এক দেশি মদের দোকানের মালিক বলেন, ‘‘এমনও দিন গিয়েছে হাজার দেড়েক বোতল বিক্রি করেছি। এখন দোকানে মালও নেই, খদ্দেরও নেই।’’

এই অস্থির সময়ের সুযোগেই মাথাচাড়া দিয়েছে চোলাইয়ের। হাওড়ার নলপুরের এক চোলাই কারবারি বলেন, ‘‘ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছিল। কিন্তু ক’দিন হল খদ্দের বেড়েছে। আগে ৫০০ লিটার মাল তৈরি করতাম। ১০-১১ হাজার টাকার কাজ-কারবার হতো। এখন ১৫ হাজারের মতো আয় হচ্ছে।’’ লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির কারবারি গৌতম গায়েনেরও (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর কথায়, ‘‘নোটের আকাল নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ, চোলাইয়ের পাউচের দাম ১০-২০ টাকা। তাই খুচরো দিয়েই সবাই মাল কেনে। নোট বাতিল হওয়ায় আমাদের কাছেই দোকানদারেরা খুচরো নিতে আসছে।’’

চোলাইয়ের ব্যবসায় যে ভাটা পড়েছিল, তা মানছেন কারবারিরাও। কার্যত, ২০১১-তে মগরাহাটে বিষমদ খেয়ে ১৭৩ জনের মৃত্যুর পরে সরকারও চোলাই ব্যবসা বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে। নবান্নের নির্দেশে পুলিশি তল্লাশি বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলা মদকে জনপ্রিয় করতে নানা পদক্ষেপ করে আবগারি দফতরও। এখন বিলিতি মদের দোকানেও দেশি মদ পাওয়া যায়। আগে রাত ৯টায় দোকান বন্ধ হয়ে যেত। এখন এক ঘণ্টা সময় বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু বাতিল নোটের ধাক্কায় ফের বাজার ধরেছে চোলাই।

hooch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy