Advertisement
E-Paper

হর্ষে ত্রাসে রাজ-ভাঁড়ারে জর্দার কৌটো

আনন্দের দিন আসছে। আনো জর্দা। এমনই নাকি মাঝেমধ্যে নির্দেশ দেয় সে! দিন খারাপ আসছে? সঙ্গে রাখো জর্দা। এমন নির্দেশও শুনতে হয় তার চ্যালাদের! হালিশহরের সরকার-বাজার থেকে প্রায়ই ডজন ডজন জর্দা-কৌটো কেনা হয়।

বিতান ভট্টাচার্য ও সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:৩১
রাজা দত্ত

রাজা দত্ত

আনন্দের দিন আসছে। আনো জর্দা।

এমনই নাকি মাঝেমধ্যে নির্দেশ দেয় সে!

দিন খারাপ আসছে? সঙ্গে রাখো জর্দা।

এমন নির্দেশও শুনতে হয় তার চ্যালাদের!

হালিশহরের সরকার-বাজার থেকে প্রায়ই ডজন ডজন জর্দা-কৌটো কেনা হয়। রাজা কখনও-সখনও পান খায়। সে জন্য অত জর্দা? দিনকয়েক আগেই ওই বাজার থেকে শ’দুয়েক জর্দা-কৌটো কিনেছে রাজ-অনুচররা। এমনই দাবি ব্যবসায়ীদের।

কিন্তু কেন? সঠিক উত্তর জানা নেই ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা বলে, জর্দা-কৌটো বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরেই কোনও এক রাতে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। ওই কৌটোই কি কৌটো-বোমায় পরিণত হয়? ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা সে রকমই। রাজার সাকরেদরা অবশ্য কোনও জল্পনার অবকাশ রাখেনি। এক সাকরেদের দাবি, ১৯ তারিখ ভোটের ফল প্রকাশ হবে। ‘দাদা’র হয়তো কোনও পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্যই জর্দা-কৌটো কেনার নির্দেশ দিয়েছে। কৌটো-বোমা বানানো হবে।

গত চার বছরে কৌটো-বোমার শব্দ গা সওয়া হয়ে গিয়েছে হালিশহরের বাসিন্দাদের। তাঁদের কয়েকজন জানিয়েছেন, গত বছর পুরভোটে জেতার পরে বর্তমান উপ-পুরপ্রধান রাজা দত্তের অনুগামীরা কৌটো-বোমা ফাটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছিল। অভিযোগ, রাজা যখন কোনও জমি বা জলাকে ‘টার্গেট’ করে তখন প্রতিবাদের স্বর শোনা গেলেও সেই এলাকায় রাতের দিকে কৌটো-বোমার শব্দ শোনা যায়। বর্তমানে টলমলে রাজ্যপাটকে আবার খাড়া করতে রাজা ভাঁড়ারের এই অস্ত্র আবার ব্যবহার করে এলাকাকে সন্ত্রস্ত করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, কৌটো-বোমা নিয়ে তাদের কাছে আলাদা করে কোনও অভিযোগ হয়নি। জর্দা-কৌটো বিক্রির বিষয়টিও তাদের জানা নেই। তবে, বোমাবাজির ঘটনা ঘটলে পুলিশ এলাকায় যায়।

রাজা যখন ‘কামড়’ দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ, তখন তার বিরুদ্ধে আরও এক ধাপ এগোলেন নিহত রাজ-অনুচর বান্টির স্ত্রী পায়েল ঘোষ। শুক্রবার ভবানীভবনে গিয়ে ডিআইজি-সিআইডি ভরতলাল মিনার কাছে রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পায়েল। দিন কয়েক আগে ব্যারাকপুরের সিপি-র কাছেও একই অভিযোগ জানিয়েছিলেন পায়েল। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনা করে রাজা তাঁর স্বামীকে সরিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় রাজাকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান পায়েল। আইজি-সিআইডি সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি খুন হয় বান্টি। পুলিশ ও সিআইডি রাজার সাত সাকরেদকে গ্রেফতার করে। পায়েলের অভিযোগ ছিল, সেই সময় তিনি বারবার রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইলেও স্থানীয় থানার পুলিশই সেই অভিযোগ নেয়নি। তা ছাড়া, তাঁকে রাজ-অনুচরদের হুমকিও শুনতে হচ্ছিল। পায়েলের এই অভিযোগ পাওয়ার পরে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ তাঁকে জানিয়েছিলেন, মূল মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। তাঁরা পায়েলের অভিযোগের তদন্ত করলেও বিষয়টি সিআইডির কাছেই পাঠানো হবে। পায়েলের পরিচিতরা জানান, রাজার উপরে তাঁর রাগটা এমনই যে, পায়েল আর কিছুতেই স্থির থাকতে পারছিলেন না। কবে সিআইডির কাছে সেই অভিযোগ যাবে, কবে তারা তাঁকে ডাকবে, তার জন্য আর সময় নষ্ট করতে রাজি ছিলেন না পায়েল। তাই শুক্রবার তিনি ভবানীভবনে যান। পায়েলের কথায়, ‘‘সিআইডির উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তাঁরা যথাযথ তদন্ত করবে বলেই আমার বিশ্বাস।’’

সিআইডি-র কাছে অভিযোগে পায়েল জানিয়েছেন, বান্টিকে খুনের পিছনে রয়েছে পুরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত গন্ডগোল। টেন্ডার বিলি-বণ্টনে রাজাই ছিল শেষ কথা। রাজা যে সব সাকরেদকে দিয়ে বেআইনি কার্যকলাপ করাত, তাদের মধ্যেই টেন্ডার ভাগ করে দিত। বান্টি আলাদা করে জমির ব্যবসা শুরু করে রাজার কোপে পড়ে। সেই জন্য রাজা বান্টিকে টেন্ডার দেওয়া বন্ধ করে। এ জন্য বান্টি ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি পুরসভাতে গিয়েই আপত্তি তুলেছিল। সেই সময় সামনে থাকা রাজার চ্যালা সোনাই ধাক্কা দেয় বান্টিকে। আরও দুই চ্যালা পাপন ও সমর বান্টিকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোকে আর ১৭ জানুয়ারির সকাল দেখতে হবে না’।

পায়েলের অভিযোগ, ওই বছর ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বান্টির মোবাইলে ফোন করে রাজা। ফোন ধরেন পায়েল। পরে ফোনে বান্টি রাজার থেকে প্রতিশ্রুতি পায়, সোনাই-পাপনদের সঙ্গে গণ্ডগোল মিটিয়ে দেবে সে। তার ডাকেই বান্টি সে দিন বকুলতলায় গিয়েছিল। আর ফেরেনি। ফিরেছিল তার লাশ।

রাজা মুখ খোলার পর থেকেই বান্টিকে খুনের ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে আসছে। এ দিনও তার দাবি, ‘‘আমি যদি বান্টিকে ফোন করে ডেকেই থাকি, তা হলে তো তার কল-রেকর্ড থাকবে। পরীক্ষা করে দেখা হোক। আর যে সময়ে ফোন করার কথা বলা হয়েছে, তখন আমি হালিশহরে ছিলাম না। যখন ও খুন হয়, তখন আমি অবশ্য কাছাকাছিই ছিলাম। এর সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। সিআইডি তদন্তভার নেওয়ার পর আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। আমার বয়ান নথিভুক্ত রয়েছে। সিআইডি ডাকলে আবার যাব।’’

hooliganism raja dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy