Advertisement
E-Paper

কিডনি চক্রের সহায় হাসপাতালের দালালও

তারা দেশ-বিদেশে কিডনি পাচার করে থাকে। এবং কলকাতার কিছু সরকারি হাসপাতালের দালালেরা তাদের কাজ সহজ করে দেয় বলে পুলিশের দাবি।

সীমান্ত মৈত্র ও প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৯:১৪
বারাসত আদালতের পথে কিডনি চক্রে ধৃত দীপক কর। শুক্রবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

বারাসত আদালতের পথে কিডনি চক্রে ধৃত দীপক কর। শুক্রবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

তারা দেশ-বিদেশে কিডনি পাচার করে থাকে। এবং কলকাতার কিছু সরকারি হাসপাতালের দালালেরা তাদের কাজ সহজ করে দেয় বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার বাগুইআটিতে ধরা পড়া দীপক করের মুখ থেকে দুই অশুভ চক্রের এ হেন যোগসাজসের খবর মিলেছে। কিডনি পাচার মামলায় পশ্চিমবঙ্গের দীপক-ঘনিষ্ঠ এক ডাক্তারকে খুঁজছে দিল্লি পুলিশ। গোয়েন্দাদের অনুমান, চক্রে জড়িত ডাক্তারদের অধিকাংশ এখন বিদেশে। আপাতত তাঁদের ফেরার অপেক্ষা।

তারই মাঝে এই নতুন তথ্যে তদন্ত নয়া মাত্রা পেয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়ানো যে দালালেরা বিভিন্ন রোগীকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যায়, তাদের একাংশের সঙ্গে কিডনি-চাঁইদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কী ভাবে?

জানা গিয়েছে, ‘শিকার’ ধরে দালালেরা তাদের নিয়ে যায় নার্সিংহোমে। মোলাকাত করিয়ে দেওয়া হয় কিডনি-চক্রের সঙ্গে, যারা অসহায় রোগীকে ‘কম খরচে উন্নত চিকিৎসা’র টোপ দিয়ে নিয়ে যায় ভিন রাজ্যে। মূলত দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে এমন রোগীদের ভর্তি করানো হয়। চক্রে সামিল ডাক্তারেরা রোগীকে ওটি-তে নিয়ে গিয়ে একটা কিডনি কেটে নেন। তার পরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে রোগীকে ট্রেন, এমনকী বিমানের টিকিটও ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ছোট-বড় মিলিয়ে কলকাতার গোটা পনেরো নার্সিংহোমের টেলিফোন নম্বর দীপকের কাছে পেয়েছে দিল্লি পুলিশ। অনুমান, সেখানকার কর্মচারী ও ডাক্তারদের একাংশের সঙ্গে কিডনি-চক্রের যোগ রয়েছে। ওই সব নার্সিংহোমেও বেশ ক’জনের কি়ডনি কাটা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ।

কিডনি পাচার দুনিয়ার ‘বেতাজ বাদশা’ টি রাজকুমার রাও সম্প্রতি রাজারহাটে ধরা পড়েছে, দিল্লি পুলিশের হাতে। দীপক ছিল তারই দলের বড় মাথা। তদন্তকারীরা বলছেন, বছর পাঁচেক আগে দক্ষিণ ভারতে দু’জনের আলাপ। তার পরেই দীপক চক্রে জড়ায়। কিডনিদাতা জোগাড় করতে বাংলা দৈনিকে দেওয়া বিজ্ঞাপনে দীপকেরই ফোন নম্বর উল্লেখ করা থাকত। ইচ্ছুক কিডনিদাতাদের সে-ই নিয়ে যেত রাজকুমারের কাছে।

তবে বখরার প্রশ্নে ইদানীং দীপক-রাজকুমারের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। তদন্তে প্রকাশ, ২০১৪-য় দীপক কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে পরিচিত এক ডাক্তারকে দিয়ে দু’জনের কিডনি কেটে পাচার করে। রাজকুমারকে অন্ধকারে রেখে লাভের টাকা সে-ই পকেটে পোরে। তখনই বিবাদের সূচনা। ওই চিকিৎসক মারা যাওয়ার পরে দীপকের কারবারে মন্দা দেখা দেয়। রাজকুমারকে ডিঙিয়ে সে দিল্লিতে ব্যবসা ছড়ানোর চেষ্টা করেও তেমন সফল হয়নি।

ঘটনাচক্রে চক্রটি ফাঁসও হয়েছে দিল্লিতে। কিছু দিন আগে উত্তরবঙ্গের এক মহিলা স্বামীকে না-জানিয়ে ওই চক্র মারফত দিল্লি গিয়েছিলেন। মোটা ‘দামের’ টোপ গিলে তিনি কিডনি বেচেন। অথচ প্রতিশ্রুতিমাফিক টাকা পাননি। তাঁর সঙ্গে পাচারকারীদের গণ্ডগোল বাঁধে। খবর পেয়ে দিল্লি পুলিশ তদন্তে নামে। অসীম সিকদার নামে এক চাঁই-সহ চক্রের পাঁচ জন দিল্লিতেই জালে পড়ে। অসীম সোদপুরের ঘোলার বাসিন্দা। তাদের জেরা করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, অন্ধ্রের রাজকুমারই চক্রের পাণ্ডা।

দীপকের ট্রানজিট রিমান্ড চেয়ে দিল্লির সরিতাবিহার থানার পুলিশ শুক্রবার তাকে বারাসত কোর্টের বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষের এজলাসে তুলেছিল। আবেদন মেনে বিচারক তাকে ১২ জুনের মধ্যে দিল্লির আদালতে পেশ করতে বলেছেন। ‘‘এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিশের রিপোর্ট ১৮ জুনের মধ্যে বারাসত আদালতে আসা চাই।’’— নির্দেশ বিচারকের।

পুলিশ সূত্রের খবর: দীপকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪১৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১২০বি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। উপরন্তু প্রয়োগ হয়েছে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার-আইনের তিনটি ধারা। দিল্লি পুলিশ ধৃতের হেফাজতে কিছু ভুয়ো নথি পেয়েছে। কোর্টের ভুয়ো কাগজও পাওয়া গিয়েছে।

kidney racket Hospital brokers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy