Advertisement
E-Paper

ক্যানসার-যন্ত্রণা কমাতে হাসপাতাল

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সম্পূর্ণ সুস্থ হবে না মানেই চিকিৎসা শেষ হয়ে যায় না। চাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশম চিকিৎসা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ পর্যায়। আর কিছুই করার নেই! রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়াই ভাল। ক্যানসারে আক্রান্ত একাধিক রোগীর পরিবারকেই অনেক সময়েই শুনতে হয় এই কথা। শেষের ক’দিন রোগশয্যায় বাড়িতেই সময় কাটে তাঁদের। কেউ কেউ আবার রোগ-যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চরম পথও বেছে নেন।

সম্প্রতি, বেলঘরিয়ার বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রীর মাকেও বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছিল হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁর ক্যানসার শেষ পর্যায়ের। সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাড়ি ফিরে ওই মহিলা গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সম্পূর্ণ সুস্থ হবে না মানেই চিকিৎসা শেষ হয়ে যায় না। চাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশম চিকিৎসা। সেই ব্যবস্থা হলে হয়তো চরম পথ বেছে নিতেন না ওই মহিলা। তবে এই ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা এ রাজ্যে প্রায় নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, কেরল, মহারাষ্ট্র এবং ত্রিপুরায় হলেও সরকারি ভাবে এ রাজ্যে উপশম চিকিৎসার সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি ক্ষেত্রে কয়েকটি হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন ভাবে এইপরিষেবার ব্যবস্থা থাকলেও তা খুবই সামান্য।

এই অবস্থায় আশা দেখাচ্ছেন একদল স্বাস্থ্য কর্মী। কল্যাণীর মদনপুরে তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন একটি উপশম চিকিৎসা হাসপাতাল। হাসপাতালের উদ্যোক্তা অমিত সরকার জানালেন, প্রায় পৌনে চার বিঘা জমির উপরে এই হাসপাতালে থাকছে ২০টি শয্যা। দু’জন আরএমও, এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি এক দল নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মী থাকবেন। বহির্বিভাগে থাকছে অন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও। অমিতবাবু বলেন, ‘‘অনেক রোগীকেই বলে দেওয়া হয় আর চিকিৎসা করিয়ে লাভ নেই। রোগ ভাল হবে না। এতে তাঁরা আরও ভেঙে পড়েন। তাঁদের জন্যই উপশম চিকিৎসার প্রয়োজন।’’

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। যে হেতু এই চিকিৎসায় রোগ সারে না, শুধু যন্ত্রণা কমে, তাই অনেকেই খরচের ভয়ে এগিয়ে আসেন না।’’ আরও এক ক্যানসার চিকিৎসক স্থবির দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার এবং কিওরেটিভ কেয়ারের মধ্যে পার্থক্য করা ঠিক নয়। ক্যানসার চিকিৎসা মাত্রেই, প্যালিয়েটিভ কেয়ার।’’ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এমনিতেই হাসপাতালগুলিতে রোগীর চাপ বেশি থাকে। ফলে চিকিৎসায় যাঁদের সুস্থ হওয়া সম্ভব, তাঁদেরই আমরা আগে ভর্তি করি। এতে যাঁদের রোগ আর সারার সম্ভাবনা নেই, তাঁদের অনেক সময়েই ভর্তি করানো যায় না। সরকারেরই উচিত এই রোগীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা।’’

তবে একটি বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর অর্ণব গুপ্তের অবশ্য দাবি, ‘‘আলাদা করে হাসপাতাল করার মানে হয় না। আমাদের হাসপাতালের মূল ভাবনাই উপশম চিকিৎসা। ৪০ বছর ধরে আমরা এই কাজ করে চলেছি। বেশ কয়েকটি বেডও রয়েছে।’’ আর এক ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা মামেন চান্ডি বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে এমন ছ’টি বেড রয়েছে। এই চিকিৎসা নিয়ে আমরা সচেতন। তবে একদম পৃথক ভাবে হাসপাতাল তৈরি হলে ভালই হয়।’’

Hospital Cancer Pain relief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy