Advertisement
E-Paper

খুনের অভিযোগ আনলেন হোটেল কর্তার স্ত্রী

পঞ্চসায়রে স্ত্রী ও বারো বছরের পুত্রকে নিয়ে থাকতেন অরিন্দমবাবু। কলকাতার ফ্লোটেলে গত চার বছর ধরে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হোটেলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২২
অরিন্দম বসুর খোঁজে জল-পুলিশের লঞ্চ। রাজাবাগানের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

অরিন্দম বসুর খোঁজে জল-পুলিশের লঞ্চ। রাজাবাগানের কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

হোটেল-কর্তার নিখোঁজের ঘটনায় খুনের মামলা দায়ের করলেন স্ত্রী।

শনিবার সকাল উলুবেড়িয়ার ৫৮ নম্বর গেটের কাছে সহকর্মীদের সঙ্গে পিকনিক করতে একটি ভাড়া করা লঞ্চে উঠেছিলেন কলকাতার গঙ্গায় ভাসমান একটি হোটেলের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরিন্দম বসু। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই লঞ্চে হোটেলের ২২ জন বিভাগীয় ম্যানেজার ছিলেন। সব মিলিয়ে লঞ্চে মোট ৩৫ জন ছিলেন। শনিবার বিকেলে পিকনিক করে ফেরার পথে হাওড়ার নাজিরগঞ্জের পোডরাঘাটের কাছে লঞ্চ থেকে পড়ে যান অরিন্দমবাবু। সেই থেকে খোঁজ মিলছে না তাঁর। লঞ্চ থেকে এ ভাবে পড়ে যাওয়ার ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে মানতে নারাজ অরিন্দমবাবুর স্ত্রী অদিতি বসু। রবিবার সকালে পশ্চিম বন্দর থানায় এই মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তার ভিত্তিতে অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করতে চলেছে পুলিশ।

লঞ্চে থাকা হোটেলের আধিকারিক জাভেদ কালাম বলেন, ‘‘বিকেল তিনটের পরে আমাদের মধ্যে গানের লড়াই চলছিল। চালকের কেবিনের পিছনে বসে ছিলাম আমরা। সঙ্গে স্যারও (অরিন্দম বসু) ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ স্যারের মোবাইল বেজে উঠতেই তিনি কথা বলতে বলতে চালকের কেবিনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই চালক চিৎকার করে বলতে থাকেন, আপনাদের সাহেব স্লিপ করে গঙ্গায় পড়ে গিয়েছেন।’’ জাভেদের কথায়, ‘‘চালকের চিৎকার শুনেই আমরা ছুটে গিয়ে দেখি, অরিন্দমবাবুর দু’টি হাত ও মাথার কিছু অংশ ভাসছে। লঞ্চের কর্মীরা গঙ্গায় দ়ড়ি ফেলে তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও না পাওয়ায় এক জন মাঝিকে অনুরোধ করি আমরা। কিন্তু তিনি গভীর জলে প্রাণ ঝুঁকি করে নামবেন না বলে জানান। এর পরে আমরা ডিসি (বন্দর), রিভার ট্র্যাফিক পুলিশকে ফোন করে ঘটনাটি জানাই।’’ ওই লঞ্চে কোনও লাইফবোট ছিল না বলে দাবি জাভেদের।

শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার পরেই কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। নামানো হয় ডুবুরি। রবিবার সকাল থেকেও দিনভর ডুবরি নামিয়ে গঙ্গায় তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তবে চালকের কেবিনের পিছনের অংশ থেকে কী ভাবেই অরিন্দমবাবু গঙ্গায় পড়ে গেলেন, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। পুলিশ জানিয়েছে, চালকের পিছনের কেবিন থেকে সিঁড়ি বেয়ে একতলায় ওঠার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পা পিছলে নীচে গঙ্গায় পড়ে গিয়েছেন তিনি।

তবে অদিতিদেবীর দাবি, তাঁর স্বামী এ রকম দুর্ঘটনার শিকার হতেই পারেন না। এর পরেই রবিবার সকালে পশ্চিম বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অদিতিদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ লঞ্চের চালক, রাঁধুনি-সহ মোট ৩৫ জনকে রবিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আলাদা আলাদা ভাবে প্রত্যেকের বয়ান নেওয়া হয়।

পঞ্চসায়রে স্ত্রী ও বারো বছরের পুত্রকে নিয়ে থাকতেন অরিন্দমবাবু। কলকাতার ফ্লোটেলে গত চার বছর ধরে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হোটেলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অরিন্দমবাবুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কিছুটা অস্বস্তিও। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ তাঁরা। ওই হোটেলের অপারেশনাল ম্যানেজার জাভেদ কালামের কথায়, ‘‘সাহেব আমাদের খুব কাছের লোক ছিলেন। ওঁর সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা ছিল না। আমাদের নিয়ে পুরো পরিবারের মতোই থাকতেন। এটা একটি নিছক দুর্ঘটনা। গতকালের এই ঘটনার পর থেকে আমরা প্রত্যেকেই শোকাহত। কিন্তু ম্যাডাম যে ভাবে আমাদের দোষ দিচ্ছেন, তাতে আমরা আরও ভেঙে পড়েছি।’’

Missing Floatel Complaint Murder Hotel Executive Picnic ফ্লোটেল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy