Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Security of Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ভুয়ো বিধায়ক ঢুকলেন কী করে? আগন্তুক গজাননের প্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন

মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সদ্যই বাড়তি উদ্যোগী হয়েছে। গত বছর তাঁর বাড়িতে রাতের অন্ধকারে এক ব্যক্তি ঢুকে পড়ায় সতর্ক হয় তারা। এ বার নিরাপত্তায় গাফিলতি দেখা গেল বিধানসভায়।

How Gajanan Sharma entered inside the West Bengal assembly house

কী করে ঢুকে পড়লেন কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়া বিধানসভা চত্বরে? বিধানসভার অন্দরে ঢুকে পড়া গজানন শর্মা তুলে দিলেন একগুচ্ছ প্রশ্ন। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৯
Share: Save:

বাজেট পেশের দিনেই বিধানসভায় অবাক কাণ্ড। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়া বিধানসভায় ঢুকে পড়লেন এক ব্যক্তি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর অসংলগ্ন কথায় এটুকু বোঝা যায় তিনি ‘ভুয়ো বিধায়ক’। কিন্তু কী করে ঢুকে পড়লেন কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোড়া বিধানসভা চত্বরে? বাজেটের দিন বিধানসভার অন্দরে ঢুকে পড়া গজানন শর্মা তুলে দিলেন একগুচ্ছ প্রশ্ন। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘বাজেট পেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে এই ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। কী করে একজন বিনা পরিচয়পত্রে ঢুকে পড়লেন তা নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের নজর দেওয়া উচিত।’’

এমনিতেই বিধানসভা কড়া নিরাপত্তায় মোড়া থাকে। মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকলে সেই নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পায়। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সভাকক্ষে। রাজ্য সরকারের পক্ষে তিনি জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান কেন্দ্রের তরফে। বুধবার বিধানসভায় হাজির থাকা অন্য মন্ত্রী, বিধায়কেরাও কেন্দ্র বা রাজ্যের তরফে নিরাপত্তা পান। দর্শকরা তো বটেই, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বিধানসভায় প্রবেশের জন্য কড়া নিয়ম মানতে হয়। সেখানে এক জন ব্যক্তি কী ভাবে ঢুকে পড়লেন সেই স্পর্শকাতর এলাকায়?

একাধিক গেট রয়েছে বিধানসভায়। তবে সবক’টি খোলা থাকে না। তবুও প্রতিটিতেই কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন থাকে। মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মন্ত্রী থেকে অন্যান্য বিধায়ক কোন গেট দিয়ে কারা ঢুকবেন, কাদের গাড়ি কোথায় থাকবে সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত। সেখানে ওই ব্যক্তির প্রবেশ নিয়ে ইতিমধ্যে চিন্তা ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। জানা গিয়েছে, বিধানসভা চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নিরাপত্তার ত্রুটিও চিহ্নিত করতে চাইছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য আলাদা বাহিনী থাকলেও বিধানসভার নিরাপত্তা দেখে কলকাতা পুলিশ।

এখনও পর্যন্ত পুলিশ সূত্রে যা জানা গিয়েছে, তাতে ওই ব্যক্তি নিজেকে গজানন শর্মা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। বিধানসভার লবিতে তিনি ধরা পড়েন। তাঁর কাছে বৈধ কোনও পরিচয়পত্র পায়নি পুলিশ। হাতে একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট নিয়েই তিনি বিধানসভায় ঢুকেছিলেন। তাঁর কাছে অবশ্য আপত্তিজনক কিছু পাওয়া যায়নি। বিধানসভার গেট থেকে অধিবেশন কক্ষ পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেকগুলি স্তর রয়েছে। বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ঢোকার ঠিক আগের স্তরে গজাননকে আটকে দেওয়া হয়। বিধানসভার গেট থেকে অধিবেশন কক্ষ পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেকগুলি স্তর রয়েছে। পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি অসংলগ্ন জবাব দিতে থাকেন। তাতেই সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। ওই ব্যক্তির পরিচয়পত্রও দেখতে চাওয়া হয়। তিনি তা দেখাতে না পারায় তাঁকে আটক করে তুলে দেওয়া হয় হেয়ার স্ট্রিট থানার হাতে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে আনন্দ বোস পাঠিয়েছেন। বিধানসভায় ঢোকার অনুমতি রয়েছে আমার। আপনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা হচ্ছে, কী ভাবে তিনি বিধানসভায় ঢুকলেন। কী তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।

প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে। তখন সদ্যই তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন মমতা। সেই সময়ে নিরাপত্তার ‘বজ্র আঁটুনি’ এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক ব্যক্তি। তিনি গোটা রাত কাটিয়ে দেন মমতার কালীঘাটের বাড়িতে। গ্রেফতার করা হয় হাফিজুল মোল্লা নামে ৩১ বছরের এক ব্যক্তিকে। জানা যায়, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে একটি লোহার রড নিয়ে ঢুকেছিলেন। কোনও বিপদ না হলেও কী ভাবে ওই ব্যক্তি ভিতরে ঢুকে পড়েন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সেই সময়ে। এর পরে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়ানো হয়। যে কোনও সভা, সমাবেশেও এখন অতিরিক্ত সতর্ক থাকে পুলিশ, প্রশাসন।

সম্প্রতি জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে নজরদারির ফাঁকফোকর আটকাতে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট এলাকায় নজরদার ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ওই ক্যামেরাযুক্ত পিআইডিএস বা ‘পেরিমিটার ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম’ বসাচ্ছে পুলিশ। ৩০টি অত্যাধুনিক ক্যামেরার মাধ্যমে বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বিধানসভায় যা ঘটল, তাকে বড় রকমের নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি বলেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE