সারা দেশেই সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টির পরিমাণ থাকবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, জানিয়ে দিয়েছে ভারতের মৌসম ভবন। গড়ে ১০৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হতে পারে দেশ জুড়ে। এর ফলে উত্তরাখণ্ড, উত্তর রাজস্থান, দক্ষিণ হরিয়ানা, দিল্লি এবং উত্তর ছত্তীসগঢ়ের কিছু অংশে কখনও কখনও অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও থাকছে। যা ডেকে আনতে পারে ভূমিধস, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের মতো বিপর্যয়। কিন্তু সেপ্টেম্বর তো দুর্গাপুজোর মাস! বৃষ্টি কি তবে বাদ সাধবে তাতেও? মাসের শেষে পশ্চিমবঙ্গে কতটা বৃষ্টি হতে পারে?
পুজোর বৃষ্টি নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কোনও পূর্বাভাস দিতে নারাজ আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এ বছর মহালয়া ২১ সেপ্টেম্বর। তার পর ২৮ তারিখ থেকে মহাষষ্ঠীতে বোধন দিয়ে পুজো শুরু। বিজয়া দশমী ২ অক্টোবর। মহালয়া কিংবা পুজোর মধ্যে কবে কতটা বৃষ্টি হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষ বুলেটিন পরে প্রকাশ করা হবে। তবে পুজোয় বৃষ্টির সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এ বছরের দুর্গাপুজোর সময়সূচি তুলনামূলক এগিয়ে এসেছে। বর্ষা পুরোপুরি বিদায় নেওয়ার আগেই পুজো শুরু হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টি চলতে পারে পুজোর দিনগুলিতেও।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত অক্টোবরের শুরুর দিকে বর্ষা বিদায় নেয়। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, অক্টোবর মাস শুরু হওয়ার পর আরও অন্তত ১০ দিন বর্ষা সক্রিয় থাকা স্বাভাবিক। প্রতি বছরই তা হয়। ফলে এ বছরেও তার অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ এ বারের পুজো বর্ষার মধ্যেই। সে ক্ষেত্রে কমবেশি বৃষ্টি হতেই পারে।
এমনিতে চলতি মরসুমে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হচ্ছে দেশের প্রায় সর্বত্র। গত রবিবার এ বিষয়ে একটি বুলেটিন প্রকাশ করেছে মৌসম ভবন। সেখানে বলা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির পরিমাণ থাকবে ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি’। তবে উত্তর-পূর্ব এবং পূর্ব ভারতের কিছু অংশ এবং দাক্ষিণাত্যের মালভূমির অনেক জায়গায় সেপ্টেম্বরে ‘স্বাভাবিকের চেয়ে কম’ বৃষ্টি হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের সামান্য কিছু এলাকা সেই তালিকায় রয়েছে। তবে কলকাতা-সহ বঙ্গের বাকি জেলায় বৃষ্টি থাকবে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশি।
অতিরিক্ত বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে সারা দেশেই সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। সেখানকার প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশে বর্ষা বিদায়ের সময় পাল্টেছে। একসময় সেপ্টেম্বরের শুরুতেই বর্ষা বিদায় নিত। কিন্তু ক্রমে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদায়ের তারিখ সরে এসেছে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যদিও দেশের সর্বত্র একসঙ্গে বর্ষা বিদায় নেয় না। কেন সেপ্টেম্বরেও এত বৃষ্টি? মৃত্যুঞ্জয়ের মতে, সক্রিয় বর্ষার সঙ্গে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার সংঘাতই এই ‘অস্বাভাবিকতা’র নেপথ্যে রয়েছে। যে কারণে বর্ষা বিদায়ের মাসেও বৃষ্টির সম্ভাবনা দাঁড়িয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
অগস্টেও দেশের নানা প্রান্তে তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গড়ে এই বৃষ্টির পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ বেশি। তবে উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং দাক্ষিণাত্যের গড় অনেকটাই বেশি। উত্তর-পশ্চিম ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৪ শতাংশ এবং দাক্ষিণাত্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে অগস্টে। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল এবং জম্মু ও কাশ্মীরে এত ঘন ঘন মেঘভাঙা বষ্টি, হড়পা বান এবং ভূমিধসের নেপথ্যেও রয়েছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর সংঘাত। পরিসংখ্যান বলছে, উত্তর ভারতে ২০০১ সালের পর থেকে অগস্টে এত বৃষ্টি এই প্রথম।
উত্তর ভারতে এ বছর বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে মেঘভাঙা বৃষ্টি। বহু প্রাণহানি হয়েছে উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীরের মতো এলাকায়। মৃত্যুঞ্জয়ের মতে, আসলে মেঘভাঙা বৃষ্টি বাড়েনি। বেড়েছে ‘ছোট মেঘভাঙা বৃষ্টি’ বা ‘মিনি ক্লাউডবার্স্ট’। সাধারণত, খুব ছোট এলাকায় (২০-৩০ বর্গকিলোমিটার) স্বল্প সময়ের জন্য অতিপ্রবল বৃষ্টি হলে তাকে ‘ক্লাউডবার্স্ট’ বা ‘মেঘভাঙা বৃষ্টি’ বলে। এ সময়ে শুধু বৃষ্টির পরিমাণই অতিপ্রবল হয় না, বৃষ্টিপাতের গতিও হয় অনেক বেশি (ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার)। ‘মিনি ক্লাউডবার্স্ট’-এর সময়ে বৃষ্টিপাতের এই গতি থাকে ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার। তাতেই নামে বিপর্যয়। উত্তর ভারতের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটছে বলে মত মৌসম ভবনের প্রধানের।