Advertisement
E-Paper

দক্ষ ডাক্তারও ভুল করে ফেলছেন কাজে! চিকিৎসার জগতে বিপদ ডেকে আনছে এআই, কী ভাবে

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তার প্রয়োগ সর্বজনবিদিত। দিন দিন এআই-কে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বাড়ছে বিপদের সম্ভাবনাও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দক্ষতা আছে। অভিজ্ঞতাও দীর্ঘ দিনের। তবু চিকিৎসকেরা নাকি ভুল করে ফেলছেন কাজে! শুধু ভুল করছেন না, চিকিৎসাপদ্ধতি বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন! অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন প্রযুক্তির উপর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রয়োগে এই বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সম্প্রতি ল্যানসেটের একটি গবেষণাতেও সেই দাবি করা হয়েছে। ফলে বিশ্ব জু়ড়ে এখন অন্যতম বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এআই।

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। শিক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, সমাজ থেকে শুরু করে রাজনীতি— সর্বত্র এআইয়ের প্রয়োগ বাড়ছে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, প্রযুক্তির হাত ধরে আশীর্বাদ হয়ে নেমে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর সঠিক প্রয়োগ মানব সভ্যতাকে আরও অনেক এগিয়ে দেবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এআই কি শুধুই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ? সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নেতিবাচক প্রভাব ধরা পড়েছে। শুধু চিকিৎসা নয়, পরিশ্রমের বিকল্প হিসাবে এআই যত বেশি মাথা তুলছে, বেকারত্বের আশঙ্কা তত বাড়ছে। প্রমাদ গুনছে মানুষ।

চিকিৎসায় এমনিতে এআইয়ের প্রয়োগ সর্বজনবিদিত। রোগনির্ণয় থেকে শুরু করে রোগের মোকাবিলা, সবেতেই ডাক্তারদের কাজ আগের চেয়ে সহজ করে তুলেছে এআই। কিন্তু ল্যানসেট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি, এআইয়ের ফলে চিকিৎসকদের দক্ষতা কমে যাচ্ছে। তাঁরা সর্বদা এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে থাকছেন, যা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। ভাবতে সাহায্য করে। এর ফলে চিকিৎসকেরা নিজে থেকে আর সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন না। মানুষের ভাবনা বা বুদ্ধির বিকল্প কি আদৌ হতে পারে এআই? বিজ্ঞানীদের একাংশ মানতে নারাজ। ল্যানসেটের রিপোর্টেও সেই উল্লেখই রয়েছে।

পোল্যান্ডের চারটি কোলনস্কোপি সেন্টারে সমীক্ষা চালিয়েছে ল্যানসেট। এই সেন্টারগুলিতে ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে এআই ব্যবহার শুরু হয়েছে। মলাশয়ের পলিপ বা অস্বাভাবিক কোষ নির্ণয়ের কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকা যে সমস্ত কোষ থেকে পরবর্তী সময়ে ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে, সেগুলি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘অ্যাডোনোমা ডিটেক্‌শন’। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এআইয়ের সাহায্য ছাড়া কোলনস্কোপিতে এই কোষ নির্ণয়ের হার আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে। এর আগে চিকিৎসকেরা নিজেদের দক্ষতায় ‘অ্যাডোনোমা ডিটেক্‌শন’-এ ২৮ শতাংশ সফল ছিলেন। ২০২১ সালের পর থেকে তা ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। ল্যানসেটের এই সমীক্ষায় অর্থসাহায্য করেছে ইউরোপীয় কমিশন, জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ সায়েন্স এবং ইটালিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ।

সমীক্ষকদের দাবি, সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে এমন ব্যবস্থার উপর সর্ব ক্ষণ যদি নির্ভর করা হয়, তবে স্বাভাবিক ভাবেই সেই ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যাবে। তখন এআই যা বলছে, তার বাইরে আর কিছু ভাবতে ইচ্ছা করবে না। অধিকাংশ সময়ে এআইয়ের পরামর্শেই চলবেন চিকিৎসকেরা। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। এটা দিনের পর দিন চলতে থাকলে একটা সময়ের পরে চিকিৎসকেরা কাজের প্রেরণা হারিয়ে ফেলবেন। মন দিতে পারবেন না। এমনকি, তাঁদের মধ্যে দায়িত্বজ্ঞানও কমে আসবে। যা বিপদ ডেকে আনতে পারে।

পোল্যান্ডের অ্যাকাডেমি অফ সিলেসিয়ার চিকিৎসক মারসিন রোমার্নজ়িক নিজেও ল্যানসেটের সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘চিকিৎসকদের উপর এআই-এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে এটাই সম্ভবত প্রথম সমীক্ষা। যে কোনও ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই এই সমীক্ষার ফলাফল প্রযুক্ত হতে পারে। চিকিৎসায় এআই ব্যবহার তো দিন দিন বাড়ছে। ফলে আমাদের সমীক্ষার ফল যথেষ্ট উদ্বেগের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতার উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে।’’

Artificial Intelligence impact of artificial intelligence Healthcare
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy