পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলাফলের পর সংসদীয় রাজনীতিতে অকংগ্রেসি, বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিজোটের সন্ধানে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, আপ, এসপি, ডিএমকে-র মতো ‘সমমনস্ক’ রাজনৈতিক দলগুলির সংসদীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সপ্তাহে তিন দিন হয়েই গোটা সপ্তাহের মতো ছুটি পড়ে গেল সংসদে। আগামী সপ্তাহে আবারও আলোচনা হবে নিজেদের মধ্যে কক্ষ সমন্বয় নিয়ে। তবে জানানো হয়েছে, এই প্রস্তাবিত জোট সম্পূর্ণ ভাবেই রাজ্যসভা কেন্দ্রিক।
আজ পশ্চিমবঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিধানসভায় স্বরাষ্ট্র বাজেট নিয়ে বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “দেশে প্রায় ৪০৩৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ১৩০৬ আসন পেয়েছে। অর্থাৎ অর্ধেক আসনও নেই তাদের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসছে সামনে, বুঝতে পারবেন। সকলে মিলে সহযোগিতা না করলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া যাবে না। সেটা অত সহজ নয়। উত্তরপ্রদেশে ৫৪টা আসন বিজেপি হারিয়েছে, অখিলেশ ৭৮টা আসন বেশি পেয়েছে। এত আনন্দ পাওয়ার (বিজেপির) কোনও কারণ নেই।’’
তবে রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, রাজ্যসভার বাইরে এই ব্লক গঠনের উদ্যোগের প্রভাব কতটা পড়বে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজ্যসভায় এই ব্লকই বা কী ভাবে পৃথক পরিচয় গড়ে তুলতে পারবে, তা-ও স্পষ্ট নয়। কারণ, তামিলনাড়ুর সরকারে কংগ্রেস নেই ঠিকই, কিন্তু ডিএমকে সরকারকে সমর্থন করে কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রে এনসিপি এবং শিবসেনা কংগ্রেসের জোটসঙ্গী। উত্তরপ্রদেশে এসপি-র সঙ্গে আপ-এর বিরোধিতা রয়েছে। তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গে লড়বে না বলে আপ নেতৃত্ব তাদের আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের মতে, রাজনীতিতে কোনও কিছুই এত আগে থেকে বলা চলে না। পঞ্জাব জয়ের পর অরবিন্দ কেজরীওয়ালের এখন প্রধান লক্ষ্য নিজেদের জাতীয় দলের মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া। অন্য কোনও নেতার মুখ চেয়ে তাঁর নিজের দলের সম্প্রসারণ নীতি থেকে পিছিয়ে আসার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, “যে যে বিষয় সংসদে বা রাজ্যসভায় বিরোধী দলগুলি এ বার তুলতে চাইছে, সেগুলির প্রায় সবই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত। ফলে আমাদের মধ্যে এই নিয়ে কোনও বিভেদ নেই। এগুলি তো আমাদেরও বক্তব্য।”
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রল-ডিজ়েলের আকাশছোঁয়া দাম, বেকারত্ব, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া পাওনা, ইউক্রেন থেকে মাঝপথে ফিরে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়গুলি নিয়ে কংগ্রেসকে বাইরে রেখেই তাঁদের ব্লক রাজ্যসভায় সরব হবে। ঘটনা হল, এই বিষয়গুলি তুলে বিজেপিকে আক্রমণ করার কথা কংগ্রেসও ভেবে রেখেছে।