কোভিড-বিধি লাটে। ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে টিকার লাইন বৈদ্যবাটী কল্পনা বসু অ্যাকাডেমিতে। বৃহস্পতিবার। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
শেষবেলায় হুগলিতে পুজোর বাজারে ভিড় জমছে। বুধবার, মহালয়ায় তর্পণের জন্য গঙ্গার ঘাটগুলিতে লাগামহীন ভিড় দেখা গিয়েছে। উৎসবের দিনগুলিতে ভিড়ের চেহারা কী হবে, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত। কারণ, অল্প হলেও জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। এখনও বহু মানুষ প্রথম ডোজ় পাননি। ফলে, সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে পুরোদস্তুর।
করোনা থেকে সাধারণ মানুষকে আগলাতে প্রশাসনের প্রধান হাতিয়ার ভ্যাকসিন। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সব জেলাবাসীকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। তা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শিথিলতা না দেখানোর আবেদন করছে প্রশাসন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলায় ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার লোকের টিকাকরণ প্রয়োজন। বুধবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ় সম্পূর্ণ হয়েছে ৭০%-এর কাছাকাছি (প্রায় ২৪ লক্ষ) মানুষের। দু’টি ডোজ়ই নিয়েছেন প্রায় ৩৩% (প্রায় ১১ লক্ষ)। অর্থাৎ, প্রায় ৩০ শতাংশের প্রথম ডোজ় নেওয়া বাকি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম ডোজ় সম্পূর্ণ না হওয়ায় ভ্যাকসিনের জোগানের অভাবকে দুষছেন স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের লোকজন।
জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সদস্য শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টিকার জোগানের অভাবেই সবাইকে দেওয়া যায়নি। জোগান পর্যাপ্ত থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রত্যেকের প্রথম ডোজ় সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। হুগলিতে রবিবারেও টিকাকরণ হয়েছে।’’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ভালই ঝঞ্ঝাটে ফেলেছিল। তার পরে সংক্রমণ কমে। মৃত্যুর সংখ্যাও তলানিতে নামে। মাসখানেক ধরে ফের একটু একটু করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে ধারাবাহিক ভাবে। তার উপরে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ইদানীং দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায়ই ৫০ পেরিয়ে যাচ্ছে। বুধবারের সরকারি বুলেটিন বলছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ৬৬ জন। এই সময়ের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে নিশ্চিন্তে নেই স্বাস্থ্য দফতর।
সংক্রমণ রোধে গত এক মাসে বিভিন্ন জায়গাকে ‘গণ্ডিবদ্ধ এলাকা’ (কন্টেনমেন্ট জ়োন) ঘোষণা করেছে হুগলি প্রশাসন। জনসচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ কমেনি। দোকানে-বাজারে, রাস্তাঘাটে মাস্কহীন মানুষ এখন অবাধে ঘুরছেন। স্পেশাল ট্রেনেও ভালই ভিড় হচ্ছে। সর্বত্র দূরত্ববিধিও শিকেয় উঠেছে।
এই ছবি চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে মাস্ক পরতে ভুল না করেন, সে ব্যাপারে শ্রীরামপুরে প্রচার চালায় পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শান্তনু বলেন, ‘‘আমাদের আর্জি, উৎসব পালন করুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পুজো কমিটি, পঞ্চায়েত-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ নিয়ে সচেতনতা ছড়ানোর আবেদন
জানানো হয়েছে।’’
পুজো কমিটিগুলিকে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কোভিড-বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে মানুষকে সতর্ক করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের তৎপরতা কমেছে।
পুজোয় মানুষের সচেতনতা এবং করোনার গতিবিধি কী হয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy