জোড়া সুখবর! হুগলির শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে শুক্রবার যমজ সন্তান প্রসব করলেন চণ্ডীতলার পদ্মা বাউড়ি। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে জানতে পারলেন, ঠিক নীচের তলাতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় তিন মাস আগে হারিয়ে যাওয়া তাঁর নবতিপর বাবা মধুসূদন বাউড়ি!
বৃদ্ধের খোঁজে টানা থানা-পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা থেকে হেন জায়গা নেই, যেখানে খোঁজ চালাননি পদ্মা ও তাঁর স্বামী বংশী পাল। শেষমেশ এক রকম আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। এ দিন মধুসূদনকে ফিরে পেয়ে পুলিশ ও হ্যাম রেডিয়োর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দম্পতি। মধ্য ত্রিশের পদ্মা বলেন, “ভোরের আলো ফোটার মুহূর্তে একসঙ্গে দুই ছেলেমেয়ের মা হওয়ার আনন্দটা অন্য রকম ছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যে বাবাকেও ফিরে পেলাম। বাবা যে আমার এত কাছে রয়েছেন, তিন দিন আগেও, ভর্তি হওয়ার পরে বুঝতে পারিনি। বাবা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। আচমকা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।”
কী করে হল এই সংযোগ?
মধূসূদন আদতে বাঁকুড়ার খাতড়ার বাসিন্দা। তবে অনেক দিন আগেই ছোট মেয়ে পদ্মাকে নিয়ে তিনি চণ্ডীতলায় চলে আসেন। বিয়ে দেন। মাস তিনেক আগে শেওড়াফুলি স্টেশনে অনাহারে অসুস্থ অবস্থায় মধুসূদনকে পড়ে থাকতে দেখেন শেওড়াফুলি ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। তবে বৃদ্ধের অসংলগ্ন কথায় তাঁরা কিছু বুঝতে পারেননি। ওয়ালশে ভর্তি করান গত ৮ অগস্ট। সেই থেকে তেতলার মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের মেঝেই তাঁর ঠিকানা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, পুলিশ ও বিভিন্ন মাধ্যমে বৃদ্ধের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছিল। শেষ পর্যন্ত হ্যাম রেডিয়োয় যোগাযোগ করেন তাঁরা। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বৃদ্ধের ছবি ও বর্ণনা দিয়ে খোঁজ চলতে থাকে। মধুসূদনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন হ্যাম রেডিয়ো অপারেটররা। তাঁর মুখ থেকেই জানা যায়, খাতড়ায় বাড়ির কথা। সেখানে পৌঁছে হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা জানতে পারেন, মধূসূদন ও পদ্মার চণ্ডীতলায় আসার কথা। চণ্ডীতলায় খোঁজ চলতে থাকে। বৃহস্পতিবার হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা বংশীর ফোন নম্বর পান। তাঁরা তাঁকে মধুসূদনের ওয়ালশে ভর্তি থাকার কথা জানিয়েছিলেন। বংশী বিশ্বাস করতে চাননি। তবে এ দিন সন্তানদের মুখ দেখেই শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। মধুসূদনও মেয়েকে দেখে আসেন। আনন্দে আত্মহারা তিনি।
হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “সন্তান হওয়ায় ওই বৃদ্ধের জামাই হাসপাতালেই থাকছেন। ফলে, বাড়িতে কেউ নেই। উনি জানিয়েছেন, স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দিনই নিয়ে যাবেন শ্বশুরকে।” সহকারী সুপারিন্টেন্ডেন্ট বাসুদেব জোতদার বলেন, “শেষ বয়সে মানুষটি মেয়ের কাছে থাকতে পারবেন, এটা ভেবে খুব ভাল লাগছে।” ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের প্রধান কাজ বিপর্যয় মোকাবিলায় সহায়তা। কিন্তু এই মানুষগুলোকে পরিবারের কাছে ফেরাতে পারা বড় প্রাপ্তি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)