Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
Howrah

Howrah: আনিস-কাণ্ড ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল! লাভলি-পতি সৌম্য এ বার সরলেন

আইপিএস অফিসার সৌম্যর আর একটি পরিচয়, তিনি তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্রের স্বামী। আনিস খানের মৃত্যুর সময়ই সৌম্যকে সরানোর দাবি উঠেছিল।

এই আইপিএস অফিসারের আর এক পরিচয়, তিনি তৃণমূলের তারকা বিধায়কের স্বামী।

এই আইপিএস অফিসারের আর এক পরিচয়, তিনি তৃণমূলের তারকা বিধায়কের স্বামী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ১৮:১৮
Share: Save:

জোরালো দাবি উঠলেও আনিস-কাণ্ডে হয়নি। কিন্তু হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় টানা হিংসার ঘটনায় বদলি করা হল হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায়কে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার থেকে হাওড়া গ্রামীণের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ, বিক্ষোভ, ভাঙচুরের মতো টানা অশান্তির ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর মনোভাব নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রেক্ষিতে শনিবার রদবদল করা হয়েছে হাওড়া পুলিশের শীর্ষপদে। হাওড়া সিটি পুলিশের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সি সুধাকরকে। নতুন কমিশনার করা হয়েছে প্রবীণ ত্রিপাঠীকে। একই ভাবে হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্যকেও সরিয়ে দিয়েছে নবান্ন। তাঁকে কলকাতা পুলিশে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর জায়গায় হাওড়া গ্রামীণের নতুন পুলিশ সুপার করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) স্বাতী ভাঙ্গালিয়াকে।

ঘটনাচক্রে, সৌম্যর আর একটি পরিচয়— তিনি তৃণমূলের তারকা বিধায়ক লাভলি মৈত্রের স্বামী। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লাভলির প্রার্থিপদ ঘোষণার পরেই বিতর্কে জড়ান এই আইপিএস অফিসার। বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্ত্রী লাভলি ভোটে প্রার্থী হওয়ায় সৌম্যকে পুলিশের উচ্চপদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর সময়ই এই পুলিশ অফিসারের বদলির জোরালো দাবি উঠেছিল। অনেকেই দাবি করেছিলেন, আনিসের মৃত্যুর ঘটনা ‘ধামাচাপা’ দিতে চাইছেন সৌম্য। কিন্তু ‘রাজনৈতিক’ কারণে তাঁকে হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে না। যদিও ওই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও সমর্থন মেলেনি। প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক— কোনও স্তরেই ওই জল্পনা বা অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি। তবে হাওড়ায় গত কয়েক দিন টানা হিংসাত্মক ঘটনার জেরেই যে সৌম্যকে সরানো হয়েছে, এমন কোনও কথাও সরকারি স্তর থেকে বলা হয়নি। বরাবরের মতোই বলা হচ্ছে, এটা ‘রুটিন বদলি’। কিন্তু গত কয়েক দিন সৌম্যের আওতাধীন হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় টানা হিংসাত্মক ঘটনার পর তাঁকে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে কলকাতা পুলিশের সাউথ ওয়েস্টের ডেপুটি কমিশনার পদে আনায় দুইয়ের মধ্যে ‘প্রত্যক্ষ যোগাযোগ’ দেখছে প্রশাসনিক মহল।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাওড়ার আমতার বাসিন্দা ছাত্রনেতা আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর তুঙ্গে ওঠে। সে সময় পুলিশের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ ওঠে। ঘটনার অব্যবহিত পরে সাংবাদিক বৈঠক করে হাওড়া গ্রামীণের তদানীন্তন পুলিশ সুপার সৌম্য জানান, নিহত আনিসের বিরুদ্ধে শিশু যৌননিগ্রহ প্রতিরোধ আইনের ধারায় মামলা রয়েছে। ওই মামলায় উলুবেড়িয়া থেকে আদালত থেকে সমনও জারি হয় আনিসের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী নাম নিয়েই অভিযোগ করেন, ‘‘আনিস খানকে খুন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ! অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ সরকার এবং হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ সুপার সৌম্য রায়ের নির্দেশে খুন করা হয়েছে আনিসকে।’’

তখন প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীদের কথায় কর্ণপাত করেনি রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু হাওড়া গ্রামীণ এলাকাভুক্ত ডোমজুড়, সলপ-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে হিংসাত্মক ঘটনার পর সৌম্যকে এলাকার শীর্ষপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সৌম্যকে ‘আড়ালে রাখতেই’ তাঁকে হাওড়ার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে কলকাতা পুলিশে নিয়ে আসা হল। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, আনিস-মৃত্যুর পর সৌম্যকে সরানোর কথা যে একেবারে ভাবা হয়নি, তা নয়। কিন্তু তা কাজে পরিণত করা যায়নি। এ বার তাই প্রথম সুযোগেই তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানো হল। তাতে এক দিকে যেমন আনিস-মৃত্যুতে তাঁর ‘ভূমিকা’ নিয়ে বিরোধীদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করা হল না, তেমনই হাওড়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে সৌম্যকে সরিয়ে এই বার্তাও দেওয়া গেল যে, প্রশাসন শাসকদলের বিধায়কের স্বামীকে ‘আলাদা নজরে’ দেখে না।

আরও পড়ুন:
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.