E-Paper

পিতৃশোক সামলে মাঠে রাজু, গোল করে জেতালেন দলকে

বঙ্গ ফুটবল নানা আত্মত্যাগের সাক্ষী। আবেগের নানা কাহিনী ঘুরে ফেরে ময়দানে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৯:২৯
খেলার আগে ড্রেসিংরুমে রাজু (বাঁ দিকে)। ভবানীপুর ক্লাবের বিরুদ্ধে হলুদ জার্সি পরে রাজু গোল করার জন্য দৌড়োচ্ছেন।

খেলার আগে ড্রেসিংরুমে রাজু (বাঁ দিকে)। ভবানীপুর ক্লাবের বিরুদ্ধে হলুদ জার্সি পরে রাজু গোল করার জন্য দৌড়োচ্ছেন। —ফাইল চিত্র।

তিনি যখন এলেন, পরনে সাদা কাপড়। খালি পা। মাথার চুল এলোমেলো। বেশ বদলে জার্সি-প্যান্ট পরে মাঠে যখন নামলেন, মুখের বেদনা স্পষ্টই পড়া যাচ্ছিল। পরবর্তী ৯০ মিনিট নাছোড় যুবক দাপিয়ে বেড়ালেন মাঠে। বেরোলেন দলকে জিতিয়ে। তারপরে ফের ধরাকাছা পরে ফিরলেন বাড়ি। বাবার মৃত্যুর দু’দিনের মধ্যেই এ ভাবেই কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের খেলায় মাঠে নেমে বুক চিতিয়ে লড়াই করলেন এরিয়ান্স ক্লাবের স্ট্রাইকার রাজু ওরাওঁ।

বঙ্গ ফুটবল নানা আত্মত্যাগের সাক্ষী। আবেগের নানা কাহিনী ঘুরে ফেরে ময়দানে। ব্যক্তিগত শোক সামলে ফুটবল পায়ে উলুবেড়িয়া স্টেডিয়ামে নেমে রাজু যেন তেমনই এক কাহিনি রচনা করলেন ময়দানের ঘাসে! তাঁর খেলোয়াড়ি মনোভাবের সম্পর্কে আলোচনায় এমনই কথা ঘুরে ফিরল উপস্থিত দর্শকদের মুখে। প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই মাকে হারানোর দু’দিনের মধ্যে মাঠে নেমে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দলকে জিতিয়েছিলেন পাঠচক্রের গোলরক্ষক অর্ণব দাস।

এ দিন এরিয়ান্সের প্রতিপক্ষ ছিল ভবানীপুর ক্লাব। এরিয়ান্স ১-০ গোলে জেতে। জয়সূচক গোলটি আসে রাজুর পা থেকেই। প্রথমার্ধের ৩২ মিনিটের মাথায় তাঁর শট বিপক্ষের জালে জড়িয়ে যায়। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার তাঁকেই দেওয়া হয়। সেই পুরস্কার নেওয়ার সময়ে চোখের কোণ চিকচিক করছিল ৯ নম্বর জার্সিধারীর। বললেন, ‘‘এই পুরস্কার বাবার নামে উৎসর্গ করলাম।’’

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান রাজু। বয়স ২৬ বছর। বাড়ি হুগলির নৈটির পায়রাগাছায়। অভাবের সংসার। ছোট থেকেই ফুটবলে ঝোঁক। কলকাতা ময়দানে খেলছেন বছর দু’য়েক। বাবা গণপতি ওরাও ছিলেন দিনমজুর। খেলে খুব বেশি উপার্জন হয় না। তাই খেলা না থাকলে মার্বেলের কাজ করেন রাজু। বললেন, ‘‘বাবা খেলাপাগল ছিলেন। খেলতে যাওয়ার সময়ে বাবাকে প্রণাম করে বেরোতাম। শনিবার রাতে বাবাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সোমবার সকালে কলকাতায় অনুশীলনে যাই। সেখানেই মৃত্যুর খবর পাই।’’

এখন বাড়িতে তাঁর মা আর স্ত্রী। রাজুর কথায়, ‘‘ফুটবল আমার রক্তে। আমার সাফল্যে বাবা নিশ্চয়ই খুশি হবেন।’’

দর্শকদের অনেকেই বললেন, ‘‘বাংলার ফুটবল বেঁচেবর্তে আছে রাজুদের জন্যই। ফুটবলের জন্য এই আবেগের জন্যই বাংলার ফুটবলে আজও দর্শক মাঠে আসেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Aryan fc

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy