Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Rangoli Competition

আলপনার শহর হয়ে উঠছে চন্দননগর

আলপনা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে শুধু এ শহর বা জেলার নয়, তার বাইরে থেকেও প্রতিযোগীরা আসেন। রং ও পাত্র সরবরাহ করেন উদ্যোক্তারা।

প্রাবন্ধিক, চন্দননগরের বাসিন্দা

আলপনায় ব্যস্ত প্রতিযোগীরা। ছবি: তাপস ঘোষ।

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, প্রাবন্ধিক, চন্দননগরের বাসিন্দা
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, প্রাবন্ধিক, চন্দননগরের বাসিন্দা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২১
Share: Save:

ক্রমশ নকশি শহরের রূপ নিচ্ছে চন্দননগর!

জগদ্ধাত্রী পুজো এলেই কয়েক বছর ধরে পাল্টে যাচ্ছে চন্দননগরের বহু রাস্তা। শুধু পিচ পড়ে রাস্তা মসৃণই হচ্ছে না, শ্বেতশুভ্র আলপনায় তা সেজে উঠছে। যা শহরের বৈশিষ্ট্যে এক নতুন পালকের মতো!

প্রায় বছর ষোলো আগে শহরের অন্যতম বারোয়ারি বাগবাজার, তাদের পুজোর ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম আলপনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। শতাধিক শিল্পপ্রেমী নাগরিক যোগ দেন। পুজোর আগে
মূল মণ্ডপের সামনের রাস্তাটি আলপনার শ্বেতশুভ্র নকশায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে ফুটে ওঠে। সেই ধারা চলছেই। বাগবাজারের দেখাদেখি গত তিন-চার বছর ধরে শহরের অন্তত আট-দশটি বারোয়ারি তাদের মণ্ডপের সামনের রাস্তায় এই প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেছে। বাবুরবাজার, আপনজন, কানাইলাল পল্লি, একত্রিশের পল্লি প্রভৃতি বারোয়ারির মণ্ডপের সামনের রাস্তা সেজে উঠবে প্রতিযোগীদের দেওয়া আলপনায়।

আলপনা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে শুধু এ শহর বা জেলার নয়, তার বাইরে থেকেও প্রতিযোগীরা আসেন। রং ও পাত্র সরবরাহ করেন উদ্যোক্তারা। তুলি নিয়ে আসতে হয় প্রতিযোগীকে। রবিবার, কালীপুজোর দিনে ওই প্রতিযোগতা হল বাগবাজার এবং শুকসনাতনতলায়। বাগবাজারে এতদিন রাস্তার উপরেই ২×২ ফুট মাপের চৌকো অংশে দু’ঘণ্টায় প্রতিযোগীদের আলপনা আঁকতে হচ্ছিল। এ বার পুজোর ১৮৯তম বছরে মোট ৩৫৪ জন প্রতিযোগী, স্থান সঙ্কুলানের কারণে বৃত্তাকার খোপে আলপনা আঁকলেন।

দক্ষিণ ভারতের প্রধান উৎসব পোঙ্গলের সময় রাস্তা জুড়ে ফুলের আলপনা দেওয়ার রীতি অনেক কালের। কিন্তু রাস্তা জুড়ে আলপনা দেওয়ার চল আমাদের রাজ্যে আগে কখনই ছিল না। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই বাগবাজারই পথিকৃৎ। এখানকার দেখাদেখি এ বার দুর্গাপুজোয় হাওড়া সেতুর আলপনাও নজর কেড়েছে অনেকের।

উত্তরপ্রদেশে যাকে বলে সেনাহা, বিহারে তাকেই বলে অরিপন, ওড়িশায় ঝঙ্গতি, মধ্যভারতে মণ্ডন, হিমাচল আর হরিয়ানায় লিখনুয়া, গুজরাতে সাখিয়া, অন্ধ্রে মুঙ্গলি, তামিলনাড়ু এবং কেরলে কোলম, মহারাষ্ট্রে রঙ্গোলি এবং বাংলাতে তাকেই বলে আলপনা।

ঘরের মেঝে বা দেওয়ালে প্রলেপ দিয়ে মাঙ্গলিক ও নান্দনিক নকশাকেই আলপনা বলা যেতে পারে। আলপনার মধ্যে লুকিয়ে আছে মানুষের সংস্কৃতির বিবর্তনের ধারাও। বিচিত্র ধরনের চিহ্ন এবং প্রতীকী চিত্র মানুষ সেই গুহায় বসবাসের সময় থেকেই ধারাবাহিক ভাবে এঁকে এসেছে। পুজো-পার্বণে বা কোনও উৎসবের সময় গ্রামবাংলার মহিলারা দেবতাদের আসনের সামনে ছাড়াও তাঁদের ঘর-বারান্দা, নিকানো উঠোন আলপনার সুষমাময় করে সাজিয়ে তোলেন।

বাংলার ব্রতকথাতেও আলপনার একটা নিজস্ব চরিত্র আছে। বাংলার নারী প্রকৃতির রূপ থেকে তুলে নিয়েছে আলপনার ঠাট। ফলে, চেনা জিনিসগুলো বিমূর্ত রূপ গ্রহণ
করে এবং একই সঙ্গে অপূর্ব
জীবনের স্পন্দন নিয়ে আসে। এ ছাড়া, বৃত্তাকার আলপনা বা ফুল-লতার আলপনাকেও আলাদা করে ভাগ করা যেতেই পারে। বাংলার ঘরের আলপনার পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ আলপনার এক নতুন দিগন্ত তুলে ধরেন। অজন্তা-ইলোরা বা ভারতীয় মোগল স্থাপত্যের পাথুরে নকশা নিয়ে আসেন তাঁদের আলপনায়।

তবে, এখন আলপনায় বিচিত্র নকশার পাশাপাশি চোখে পড়ে চলচ্চিত্র, রাজনৈতিক এবং
ঐতিহাসিক ঘটনার চিহ্নও। থিমের পাশাপাশি পথের আলপনাও উৎসবের অঙ্গ হয়ে উঠছে, এ ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE