E-Paper

নষ্ট নীড়

পরিবেশ বা পশুপ্রেমীদের বক্তব্য, ওই প্ল্যাটফর্মের একটি গাছে প্রচুর পানকৌড়ি এবং বক থাকত। বাসায় তাদের প্রচুর ছানা এবং ডিমও ছিল।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৭
কোপ পড়া গাছে ফের বাসা।

কোপ পড়া গাছে ফের বাসা। নিজস্ব চিত্র।

গাছের ডালপালা মুড়িয়ে কাটায় দিন কয়েক আগে ‘বেঘর’ হয়েছে পাখির দল। বেশ কিছু ছানা মারা গিয়েছে। উদ্ধার করে অনেকগুলিকে পাঠানো হয়েছে বন দফতরের আশ্রয়ে। বৃহস্পতিবার দেখা গেল, রিষড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সেই ন্যাড়া গাছেই ফের বাসা বেঁধেছে পানকৌড়ি। পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করলেও যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যের জন্যই ওই কাজ করা হচ্ছিল বলে দাবি করেছে। তবে, সেই কাজ কেন ‘মানবিক’ ভাবে করা গেল না, উঠছে সেই প্রশ্ন।

পরিবেশ এবং পাখিদের কথা না ভেবে যেমন খুশি গাছ কাটা নিয়ে রেলের সিদ্ধান্তের নিন্দা চলছে নানা মহলে। রিষড়ার এই ঘটনা নিয়ে এ বার আন্তর্জাতিক পশু অধিকার সংগঠন ‘পেটা’র (পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যাল) দ্বারস্থ হল পশুপ্রেমীদের সংগঠন ‘আশ্রয়’ (হোম অ্যান্ড হসপিটাল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন)। সংগঠনের সম্পাদক গৌতম সরকার বৃহস্পতিবার ‘পেটা’য় অভিযোগ জানান।

পরিবেশ বা পশুপ্রেমীদের বক্তব্য, ওই প্ল্যাটফর্মের একটি গাছে প্রচুর পানকৌড়ি এবং বক থাকত। বাসায় তাদের প্রচুর ছানা এবং ডিমও ছিল। সেই অবস্থাতেই ওই গাছ মুড়িয়ে কাটায় ছানারা প্ল্যাটফর্মে পড়ে। সাধারণ মানুষ, পরিবেশ ও পশুপ্রেমী এবং বন দফতরের তৎপরতায় কিছু পাখি উদ্ধার হয়।

আশ্রয়-এর সম্পাদক গৌতম সরকারের বক্তব্য, রেলের প্রয়োজনে গাছ ছাঁটতে হতে পারে। কিন্তু তার জন্য ডিম, ছানা-সহ পাখিদের জীবন বিপন্ন করা হবে কেন? কেন বন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে পাখিদের বংশবিস্তারের সময় এড়িয়ে ওই কাজ করা গেল না? দেশীয় পাখি পোষা শাস্তিযোগ্য। রেলের ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ কাজের জন্য প্রচুর পাখি হত্যার বিচার বা শাস্তি হবে না?

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্যের দোহাই দিয়ে প্ল্যাটফর্মে গাছ কাটার হিড়িক চলেছে। বহু ক্ষেত্রে ডালপালা ছাঁটার নামে কার্যত মুড়িয়ে গাছ কাটা হয়। সম্প্রতি হিন্দমোটর, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি-সহ নানা স্টেশনে এই ‘নিষ্ঠুরতা’ চোখে পড়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, রিষড়ায় পাখিদের বিপন্নতা চোখের সামনে উঠে আসায় হইচই হচ্ছে। অন্যত্রও একই কারণে পাখিদের ‘ঘরছাড়া’ হতে হয়েছে। শেওড়াফুলিতে স্টেশনের উন্নয়নের কাজে গাছ কাটা পড়বে বলেও রেল সূত্রে জানানো হয়েছে।

পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে বাঁচতে গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা যখন বাড়ছে, তখন গাছ না কেটে রেলের উন্নয়ন কি সম্ভব নয়? সম্প্রতি হাওড়ায় গাছ অন্য জায়গায় সরানো হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। নিতান্তই প্রয়োজন পড়লে না কেটে গাছের এ ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক, এই দাবিও উঠছে।

রিষড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে পূর্ব রেলের ব্যাখ্যা, যাত্রী নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতেই স্টেশনে গাছ ছাঁটা হয়। তবে সেই কাজে গাছে বসবাসকারী পাখিদের সমস্যাও কাম্য নয়। সে জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ‘দুঃখিত’। রেলের বক্তব্য, হাওড়া শাখার জনবহুল বিভিন্ন স্টেশনে গাছের ডালপালা প্রসারিত হওয়ায় মাঝেমাঝেই ট্রেন চলাচল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। ফলে, যাত্রীদের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। ঝড়বৃষ্টিতে গুড়াপ স্টেশনে একটি বড় গাছ উপড়ে সমস্যা হয়েছিল সম্প্রতি। সেই কারণেই গুড়াপ, রিষড়া এবং অন্যান্য স্টেশনে গাছ ছাঁটা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rishra

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy