বিহারের শোননগর থেকে বর্ধমানের অন্ডাল হয়ে টানা ডানকুনি পর্যন্ত রেলের ফ্রেট করিডর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেলমন্ত্রকের ইঙ্গিত, ডানকুনি নয়, অন্ডাল পর্যন্তই হতে চলেছে পণ্য পরিবহণের করিডর। এই পরিস্থিতিতে ডানকুনির ব্যবসায়ী মহল হতাশ। শুরু হয়েছে রাজনীতির চাপানউতোরও।
ডানকুনি ফ্রেট করিডরের প্রস্তুতির কাজ দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নোটিফিকেশনের কাজ হয় ২০১৫ সালে। এরপরে মাঝে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা থাকলেও ফের মাথাচাড়া দেয় ২০২০ সালের শেষ লগ্নে। তারপরে ডানকুনি থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরত্বের পণ্য পরিবহণের পথ সুগম করতে রেল কর্তৃপক্ষ সমীক্ষার কাজ শুরু করে। ডানকুনির গোবরা এবং সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে সাময়িক ওই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিরোধিতার আভাস মিলছিল। শাসকদলও সিঁদুরে মেঘ দেখে। কারণ, সিঙ্গুর-লাগোয়া ওই জায়গায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়নের প্রশ্নে ফের যদি কোনও জোরদার বাধার সৃষ্টি হয়, তা হলে শিল্পমহলে রাজ্যের নামে ‘ভুল বার্তা’ যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
যদিও পরে বিরোধিতা বা আন্দোলন বিশেষ দানা বাঁধেনি। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার রেল লাইনের পাশ দিয়ে ফ্রেট করিডরের জন্য নির্দিষ্ট জমি সমীক্ষা ও অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয় নির্বিঘ্নেই। স্থানীয় মানুষের মধ্যে সে সময় থেকেই আশার সঞ্চার হয়, বিশেষত যাঁরা ওই প্রকল্পের কাজে জমি দিয়েছিলেন। রেল কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত করলে স্থানীয়স্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হলেও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন প্রকল্পের প্রশ্নে অনেকটাই হাত গুটিয়ে নিল কেন্দ্র।
ডানকুনির ব্যবসায়ী নবীনচন্দ্র ঝা বলেন, ‘‘ডানকুনিতে ফ্রেট করিডর তৈরি হলে আমাদের আশা ছিল, পণ্য পরিবহণের খরচ অনেকটাই কমবে। কারণ, এখন সড়ক পথে আনতে হয় মালপত্র। খরচ বেশি। যানজটের সমস্যা আছে। পণ্য পরিবহণে কম টাকা খরচ হলে সাধারণ মানুষকেও কিছুটা সস্তায় আমরা পরিষেবা দিতে পারতাম। রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত ফের বিবেচনা করা উচিত।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র শুক্রবার বলেন, ‘‘আপাতত নির্দিষ্ট আছে, ওই প্রকল্প অন্ডাল পর্যন্তই হবে। তবে ডানকুনির অংশে প্রকল্পের কাজও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। জমির সমীক্ষা এবং অধিগ্রহণের কাজও চূড়ান্ত হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্মাণের কাজও অনেকটাই সারা হয়ে গিয়েছিল।’’ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার আমাদের রাজ্যের প্রতিটি প্রকল্প নিয়েই এ ভাবেই টালবাহানা করছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ যোগদান জরুরি। রাজ্যে সরকার সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন্দ্র সব বিষয়েই অনীহা দেখাচ্ছে।’’ বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মোহন আদকের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের মানুষ জানেন, শিল্পের প্রশ্নে এ রাজ্যের শাসকদল কতটা আন্তরিক!’’ তবে প্রকল্প হোক, তাঁরাও চাইছেন। মোহন বলেন, ‘‘আমরা রেলের সিদ্ধান্ত শোনার পরেই রাজ্যে দলের সাংগঠনিক স্তরে বিষয়টি জানিয়েছি। এ রাজ্যে আমাদের দলের যাঁরা সাংসদ আছেন, তাঁদের দিয়েও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে আর্জি জানিয়েছি। আবারও জানানো হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)