উদ্ধার হয়েছে ২০০ কেজি বাজি। ছবি: দীপঙ্কর দে।
শব্দ-সন্ত্রাস ও পরিবেশ দূষণ রুখতে এবং করোনা সংক্রমিতদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সব ধরনের বাজি বন্ধের দাবিতে হুগলিতে নাগরিক আন্দোলন চলছিলই। সেই দাবিতে সিলমোহর পড়ল কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে। শুক্রবার হাই কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, শব্দবাজি হোক বা আতশবাজি— কোনও বাজিই পোড়ানো বা ফাটানো যাবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী এবং নাগরিক সংগঠনগুলি। খুশি চিকিৎসকরাও। তাঁরাও এই নির্দেশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকার সমালোচনাও শোনা যাচ্ছে। শনিবার পর্ষদ নির্দেশিকা দিয়ে জানায়, কালীপুজো এবং ছটপুজোয় দু’ঘণ্টা ‘সবুজ বাজি’ পোড়ানো যাবে। কিন্তু, কোনগুলি সবুজ বাজি, তার তালিকা কোথায়, এই ধরনের বাজি কোথায় বানানো হয়— তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। সবুজ বাজির স্টিকার সেঁটে দূষণ ছড়ানো বাজিই ব্যবহার হবে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়। কারবারিরাও জানান, সবুজ বাজি নিয়ে তাঁদের ধ্যানধারণা নেই। এই অবস্থায় হাইকোর্টের রায়ে পরিবেশকর্মীরা স্বস্তিতে। নির্দেশ যাতে যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়, সেই দাবি তুললেন তাঁরা।
হুগলিতে ৪৫টি সংগঠন একজোট হয়ে ‘বাজিবিরোধী মঞ্চ’ গড়েছে। হাইকোর্টের রায় যথাযথ ভাবে কার্যকর করার দাবিতে কাল, রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনে প্রচার করবে তারা। ডিজে বন্ধের দাবিতেও প্রচার চালাবে। মঞ্চের সদস্যদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই প্রচুর বাজি বিক্রি হয়েছে। আতশবাজি তো বটেই, অনেক শব্দবাজিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলি ফাটানো বা পোড়ানো বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমির সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রদীপ এবং মোমবাতিতেই উৎসব পালন করতে হবে। হাই কোর্টের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব রাজ্য সরকার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং আমাদের সকলের। পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও এই আবেদন রাখছি।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের দাবি, বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সাউন্ড লিমিটার ছাড়া যাতে মাইক না বাজে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতা প্রচার করতে হবে। উৎসবের দিন কড়া নজরদারি চালাতে হবে। নির্দেশ না মানলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কালীপুজোর সময় হুগলির বিভিন্ন শহরে বাজির অস্থায়ী দোকান বসে। এ বারে এখনও তা বসেনি। তবে, বাজি তৈরির জায়গাগুলিতে বিক্রি থেমে নেই। চণ্ডীতলার খরসরাইতে শব্দবাজি তৈরি নিয়ে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পরেই পুলিশের টনক নড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতে খরসরাই, জেলেপাড়া, মালপাড়া, মনসাতলা ছাড়াও গরলগাছার কৃষ্ণপুরে হানা দিয়ে সব মিলিয়ে ২০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত এবং ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। উদ্ধার হওয়া বাজির মধ্যে চকোলেট বোমা, গাছবোমা, বোমা তৈরির মশলা রয়েছে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বাজির কারিগরদের পুলিশ ধরেছে। পিছনে থাকা রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুক্রবারেও খরসরাইয়ের নানা জায়গায় ক্রেতাদের আনাগোনা
লেগে ছিল।
চুঁচুড়ার কামারপাড়ার দেবাশিস যশ লাইসেন্স নিয়ে বাজি বিক্রি করেন। চলতি বছরে হাই কোর্টে মামলা চলায় সরকার লাইসেন্স নবীকরণ করেনি। তবে, তিনি আতশবাজি বিক্রি শুরু করে দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সবুজ বাজি নিয়ে আমার সম্যক ধারণা নেই। ভেবেছিলাম ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকির মতো যে সব আতশবাজি বাচ্চারা পোড়াতে পারে, সেগুলি সবুজ বাজি। সেগুলিই বিক্রি করছিলাম। অস্থায়ী দোকানিরা আমার থেকে বাজি কেনেন। ৫-৬ লক্ষ টাকার বাজি তুলেছি। এখন কী করব, চিন্তায় পড়ে গেলাম। মার্চ মাসে আমরা বাজি তুলি। আগে থেকে নিষিদ্ধ করলে, সমস্যা হত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy