Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Arambagh

দ্বারকেশ্বরের ভাঙনে বিপন্ন হচ্ছে চাঁদুর বনভূমি, উদ্বেগ

এলাকাবাসীরা জানান, ২০১৭ সালে বন দফতরের হাওড়া ডিভিশনের আধিকারিকরা একদফা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ হয়নি।

ভাঙনের মুখে বনাঞ্চল। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

ভাঙনের মুখে বনাঞ্চল। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:১৫
Share: Save:

দ্বারকেশ্বর নদের ভাঙনে বিপন্ন হুগলি জেলার একমাত্র বনভূমি, চাঁদুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে দু’পাড় বরাবর এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদে তলিয়ে গিয়েছে। বন‌রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দফতর কোনও পদক্ষেপই করেনি। উল্টে, পাড় থেকে গাছ চুরি, জমি বেদখলের ঘটনা চলছেই। তাতে ভাঙনের শঙ্কা বাড়ছে।

একটি পরিবেশ সংগঠনের কর্মকর্তা মঙ্গল সাউয়ের ক্ষোভ, ‘‘বন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় আমরা নদের পাড় সংস্কারের দাবি করেছি বহু বার। কিন্তু, যাদের জায়গা, সেই বন দফতরের সাড়া নেই। নদের তদারকিতে থাকা সেচ দফতরও গা করেনি।’’ নদের পাড়ে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, আরামবাগের পারআদ্রার বিমল দে, কীর্তিচন্দ্রপুরের মোজাম্মেল হোসেন, চাঁদুরের মৃণাল সরকার, পশ্চিম পাড়ে ভাদুরের সুশোভন রায় প্রমুখও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

নদের গর্ভে বনভূমি তলিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট আরামবাগ পুরসভা এবং ভাদুর পঞ্চায়েতও। পরিস্থিতির জন্য সেখানকার কর্তারা সরকারি দফতরকেই দুষছেন। আরামবাগের পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারী বলেন, ‘‘পুর এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড-সহ বনভূমির পূর্ব পাড় বরাবর প্রায় দেড় কিমি জুড়ে প্রতি বছর ভাঙন হচ্ছে। বিষয়টি বন দফতরের নজরে আনা হলেও কিছুই হয়নি। সেচ দফতরও চুপ। উচ্চবাচ্য করছে না।’’ একই অভিযোগ ভাদুর পঞ্চায়েতের প্রধান শান্তিনাথ রায়ের।

এলাকাবাসীরা জানান, ২০১৭ সালে বন দফতরের হাওড়া ডিভিশনের আধিকারিকরা একদফা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ হয়নি। গাছ চুরি এবং জমি বেদখলের অভিযোগ না মানলেও নদের ভাঙনে বনভূমি ধ্বংস নিয়ে উদ্বেগে বন দফতরও। ওই দফতরের আরামবাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার শুভঙ্কর সিকদার বলেন, ‘‘বনভূমির ভাঙন বা ক্ষয় আমাদেরই রুখতে হবে। তবে, সংস্কারের পরিকল্পনা হয়নি।’’ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের (আরামবাগ রেঞ্জ এই ডিভিশনেই) এক কর্তা জানান, কয়েকটি জায়গায় বোল্ডার ফেলে বাঁধ রক্ষার পরিকল্পনা রয়েছে।

চাঁদুর জঙ্গলে সেগুন, শাল, শিশু, শিরীষ ইত্যাদি গাছ রয়েছে। এই বনভূমি দ্বারকেশ্বর নদের পূর্ব পাড়ে আরামবাগ, পশ্চিম পাড়ে ভাদুর এবং পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহির ৬৪০ একর জুড়ে বিস্তৃত। পাড় ভাঙছে মূলত চাঁদুরের একাংশ এবং পারআদ্রা মৌজা মিলিয়ে দেড় কিমি জুড়ে। উল্টো দিকে ভাদুর মৌজা বরাবর প্রায় এক কিমি ভাঙছে।

হাওড়া ডিভিশনের বনকর্তার খেদ, ‘‘নদের পাড় থেকে বেআইনি ভাবে যথেচ্ছ বালি তোলার ফলেই অধিকাংশ জায়গায় ভাঙন হচ্ছে। কিন্তু, বালি তোলা বন্ধে কিছু করার এক্তিয়ার আমাদের নেই।’’

উদাসীনতার অভিযোগ উড়িয়ে জেলা সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট দফতর বা সরকারি কোনও স্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরে কোনও সুপারিশ আসেনি। আরামবাগের দিকে চাঁদুর মৌজার জঙ্গলভূমি সংলগ্ন মরাপুর পর্যন্ত বাঁধের আমূল সংস্কার করা হচ্ছে। এই অংশই আমাদের দেখার কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arambagh River Erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE