Advertisement
০১ মে ২০২৪
Life Imprisonment

জামাইবাবুকে খুনের ছক, বাধা দেওয়ায় মায়ের ঘাড়েই কাটারির কোপ! হুগলিতে যাবজ্জীবন জেল ছেলের

আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অরুন্ধতী ভট্টাচার্য চক্রবর্তীর এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। এই মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। মঙ্গলবার সুকুরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৭
Share: Save:

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রাতে বাড়ি ফিরেছিলেন ছেলে। ঘরে ঢুকেই কাটারি বার করে আনেন। অত রাতে ছেলেকে কাটারিতে শান দিতে দেখে চমকে গিয়েছিলেন মা। প্রশ্ন করায় যুবক উত্তর দিয়েছিলেন, জামাইবাবু তাঁকে অপমান করেছেন। তাঁকে খুন করতে চান। তা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন মা। ছুটে গিয়ে ছেলের হাত থেকে কাটারি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু কাড়াকাড়ির মধ্যে সেই কাটারি দিয়েই ঘাড়ে কোপ বসিয়ে দেন ছেলে! বছর চারেক আগে হুগলির পাণ্ডুয়ায় মাকে খুনের অপরাধে সেই ছেলে সুকুর মল্লিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল চুঁচুড়া আদালত।

আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অরুন্ধতী ভট্টাচার্য চক্রবর্তীর এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। এই মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। মঙ্গলবার সুকুরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর পর বুধবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শোনালেন বিচারক। পাশাপাশিই নির্দেশ, দু’হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাদণ্ড।

চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী সুব্রত গুছাইত জানান, ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই পাণ্ডুয়া থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পাণ্ডুয়ার বোসপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন হাজিরা বিবি ও তাঁর পরিবার। রোজ রাতেই নেশা করে বাড়ি ফিরতেন হাজিরার বড় ছেলে সুকুর। ঘটনার দিন মদ খাওয়া নিয়ে সুকুরকে বন্ধুদের সামনে বকাবকি করেছিলেন যুবকের জামাইবাবু আনোয়ার মল্লিক। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসাও হয়। এর পরেই বাড়ি ফিরে জামাইবাবুকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করেন সুকুর। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘সেই দিন রাত ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরেছিল সুকুর। বাড়ি ফিরে কাটারিতে ধার দিতে বসেছিল। তা দেখে প্রশ্ন করেছিলেন হাজিরা— ছেলে কেন এত রাতে কাটারিতে ধার দিচ্ছে! তখন সুকুর তার মাকে জানায়, সে জামাইবাবুকে মারতে চায়। কারণ জামাইবাবু তাকে তার বন্ধুদের সামনে অপমান করেছে। তা শুনেই ছেলের হাত থেকে কাটারি কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন হাজিরা। সেই সময়েই ঘাড়ে কোপ মেরে মাকে খুন করে ছেলে।’’

সরকারি আইনজীবী জানান, এক বার নয়, মায়ের শরীরে একাধিক বার কোপ মেরেছিলেন ছেলে। ওই ঘটনার পর হাজিরাকে পাণ্ডুয়া হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সুকুরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলন তাঁর জামাইবাবু আনোয়ার। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আনোয়ারের এক নাবালক শ্যালক ও শ্যালিকা। পরে পাণ্ডুয়া হাট থেকে সুকুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুকুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার পর আনোয়ার বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছি সুকুরকে ভাল করতে। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টে আমাকে মারার জন্য কাটারি ধার দিচ্ছিল। শাশুড়ি বারণ করায় তাঁকেই খুন করল। আমার স্ত্রীর আরও দুই ভাইবোন আছে। ওরা ছোট। ওদের ভাল করে মানুষ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Life Imprisonment Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE