E-Paper

বাতিল যন্ত্রে সিটি স্ক্যান! হাওড়া হাসপাতালেও কি চক্রের প্রভাব?

অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সিটি স্ক্যান পরীক্ষার যন্ত্রটি বাতিল করার পরেও গত ১০ বছর ধরে অজ্ঞাত কারণে সেটি চালু রয়েছে। নতুন করে দরপত্র ডেকে সেই যন্ত্র পাল্টানো হয়নি।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৯
হাওড়া পুরসভা।

হাওড়া পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মতো হাওড়া জেলা হাসপাতালেও সিটি স্ক্যান বিভাগ চলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে বা পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে। এই বিভাগ নিয়ে একাধিক অভিযোগ ধূমায়িত হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। গত শনিবার সিটি স্ক্যান করাতে আসা এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বিভাগেরই এক কর্মীর বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সিটি স্ক্যান পরীক্ষার যন্ত্রটি বাতিল করার পরেও গত ১০ বছর ধরে অজ্ঞাত কারণে সেটি চালু রয়েছে। নতুন করে দরপত্র ডেকে সেই যন্ত্র পাল্টানো হয়নি। বদলানো হয়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ চালানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাকেও। একই ভাবে, হাওড়া হাসপাতাল জুড়ে রাতে দুষ্কৃতীদের অবাধ আনাগোনা চললেও ১৪ বছর ধরে থাকা নিরাপত্তা সংস্থাকে সরিয়ে নতুন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যা দেখেশুনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশই প্রশ্ন তুলছেন, বছরের পর বছর দরপত্র না ডাকার পিছনে কি স্বাস্থ্য দফতরের কোনও প্রভাবশালী চক্র কাজ করছে? যাদের হাত মাথায় থাকায় দরপত্র ডাকা হচ্ছে না?

কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ুয়া-চিকিৎসক তরুণীকে
ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার রেশ না কাটতেই রাতের সরকারি হাসপাতালে যৌন নির্যাতনের তালিকায় গত শনিবার নাম উঠেছে হাওড়া জেলা হাসপাতালের। তার পর থেকেই হাসপাতালের প্রশাসনিক মহল থেকে শুরু করে চিকিৎসক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে অন্যান্য জেলা হাসপাতালের সঙ্গে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সিটি স্ক্যান বিভাগ চালানোর জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ঠিক দু’বছরের মাথায় ২০১৪ সালে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর গঠিত এক বিশেষজ্ঞ কমিটি সিটি স্ক্যানের যন্ত্রটি বাতিল বলে ঘোষণা করে। ফের দরপত্র ডেকে নতুন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়।

অথচ অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ কমিটির সেই সিদ্ধান্তের পরেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর গত দশ
বছরে নতুন দরপত্র ডাকেনি। দরপত্র ডাকতে দেওয়া হয়নি হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরকেও। যার অর্থ, বাতিল হয়ে যাওয়া ওই সিটি স্ক্যান যন্ত্রেই এত বছর ধরে রোগীদের পরীক্ষা চলেছে। শেষে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে বার বার চাপ দেওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে দরপত্রের ‘টেকনিক্যাল বিল ওপেন’ হয়। অর্থাৎ, দরপত্রের প্রক্রিয়া চালু হয়। কিন্তু তার পরে প্রায় আট মাস কাটতে চললেও সেই প্রক্রিয়া বিশেষ এগোয়নি বলে অভিযোগ।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এই পিপিপি মডেল প্রথম থেকেই ভুলে ভরা।
বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে প্রথম যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে কোথাও বলা ছিল না, সিটি স্ক্যান বিভাগে ২৪ ঘণ্টা মহিলা কর্মী রাখতে হবে। যার জন্য কোনও দিনই রাত ৮টার পরে সেখানে মহিলা সহকারী থাকতেন না। শনিবারও ছিলেন না।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে দীর্ঘ
বছর ধরে থাকা সংস্থাকেও পাল্টানো হয়নি। কারণ, সেখানেও দরপত্র ডাকা হয়নি। অথচ, হাসপাতালের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রভাবশালী চক্রের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরকেও জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে সিটি স্ক্যানের আধুনিক যন্ত্র চালু হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah District Hospital Howrah CT Scan Medical Negligence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy