পসরা সাজিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে দোকানের কর্মীরা। কিন্তু শেষ বৈশাখের তপ্ত দুপুরে রাস্তা কার্যত খাঁ খাঁ করছে। শাড়ি-গয়নার দোকানে ঢুকবেন কে?
করোনাভাইরাসকে বাগে আনতে রাজ্য সরকার যে নিয়ন্ত্রণ এনেছে, তাতে শাড়ি এবং গয়নার দোকান খোলার সময়সীমা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত। কিন্তু দুই জেলাতেই দোকানগুলিতে ক্রেতার দেখা মিলছে না। পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের।
ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও এ দিন উলুবেড়িয়ার একটি বড় সোনার দোকান খোলোইনি। তার মালিক বলেন, ‘‘একটা বড় সোনার দোকান খুলতে গেলে যা খরচ, মাত্র তিন ঘন্টার বেচাকেনায় তাতে পোষাবে না। তা ছাড়া যান চলাচল বন্ধ। কর্মচারীরাই বা আসবেন কী ভাবে? তাই আমরা দোকান খুলিনি।’’
শেওড়াফুলিতে হাট এবং জিটি রোডের ধারে স্থায়ী-অস্থায়ী বেশ কিছু শাড়ির দোকান আছে। মঙ্গলবার অল্প কিছু দোকান খোলা ছিল। কিন্তু কার্যত মাছি তাড়াতে হয়েছে দোকানিদের। শেওড়াফুলি হাটের কয়েকজন পোশাক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, তাঁদের ব্যবসা মুলত হাটের পাইকারি আনাজ ও মুদি দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপরে নির্ভর করে। ওই সব দোকান ১০টায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুপুরে পোশাকের দোকানে খদ্দের হবে না।
পান্ডুয়ার একাধিক কাপড়ের দোকানে দেখা গেল, কর্মচারীদের নিয়ে মালিক বসে আছেন খদ্দেরের অপেক্ষায়। একই অবস্থা সোনার দোকানের ক্ষেত্রেও। আরামবাগ থেকে চন্দননগর, ডানকুনি থেকে সিঙ্গুর— সব ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। পান্ডুয়ার এক পোশাকের দোকানের এক কর্মী বলেন, ‘‘কিনবে কে? রাস্তায় পুলিশ ছাড়া আর কাউকে তো চোখে পড়ছে না।’’ এখানকার একটি সোনার দোকানের মালিক গোপালচন্দ্র দে বলেন, ‘‘দোকান খুললে আলো-সহ নানা খরচ। খদ্দেরই যদি না আসে, তা হলে শুধু খরচই হবে। কাল থেকে দোকান খুলব কিনা, ভাবছি।’’
চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ট্রেন-বাস, অটো-টোটো সবই বন্ধ। লোকজন আসবেন কী করে? ফলে কড়াকড়ি যত দিন কার্যকর থাকবে, তত দিন ক্রেতার দেখা মিলবে না বলেই তাঁরা মনে করছেন। হরিপদ দাস নামে এক বস্ত্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘দোকান খোলা থাকলেও গত বারের লকডাউনের পরিস্থিতিই হয়েছে।’’ একই কথা বলছেন শ্রীরামপুরের অনেক ব্যবসায়ী।
হুগলি চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বসুর আক্ষেপ, পরিস্থিতির জন্য ব্যবসা কার্যত বন্ধের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার মার্কেটে লোক হয় সন্ধ্যার পরে। মফস্সলের মার্কেটের জন্য দুপুরের পরিবর্তে সন্ধ্যায় তিন-চার ঘণ্টা দোকান খোলার ছাড়পত্র দিলে সামান্য কিছু বিক্রি হলেও হতে পারে। এই বিষয়টি প্রশাসন একটু ভাবুক।’’