কোভিড সংক্রান্ত কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছা়ড়াই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত ঝুঁকির কাজ তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুললেন আশাকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গোঘাট-২ নম্বর শ্রীপুর হাটতলায় এক কোভিড পজিটিভ বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে স্থানীয় আশাকর্মী নন্দিতা লাহাকে তা যাচাই করতে অনুরোধ করেছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ ভট্টাচার্য। আশাকর্মী নিজের সুরক্ষার প্রশ্ন তুলে সেখানে যাননি।
নন্দিতা বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ফোনে আমাকে করোনা মৃতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর চোখ দেখতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম আমার কোনও প্রশিক্ষণও নেই, কোন সুরক্ষা কিটও নেই। আমি যাইনি।’’ এ নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ ভট্টাচার্য বলেন, “স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হয়েছিল। আশাদের নিয়ে কোন মন্তব্য করব না।’’
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর থেকে মৃত্যু নিশ্চিত করা এবং মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত গাফিলতি হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কেউ আসেননি। শববাহী গাড়ি পাঠিয়ে মৃতদেহ তুলে হাসপাতালে পাঠাতে বলেছিলেন। কিন্তু কোভিড পজেটিভ মৃতদেহ তোলার মতো কোন সুরক্ষা কিট ছিল না। সেই পিপিই কিট হাসপাতাল থেকে পরে পাঠানো হলেও বিপর্যয় মোকাবিলায় যে সব স্থানীয় স্বেচ্ছাসবী ছিলেন, তাঁরা মৃতদেহ তুলতে আপত্তি করেন। অবশেষে গোঘাট-২-এর বিডিও অভিজিৎ হালদার লোক এনে মৃতদেহ তুলে আরামবাগের পল্লিশ্রী কোভিড শ্মশানে পাঠান।
বিডিও বলেন, “মৃতদেহ তোলার লোকের অভাবে একটু দেরি হয়েছিল। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা আতঙ্কিত হয়ে মৃতদেহ তুলতে চাননি। খবর পেয়ে ব্লক থেকে লোক নিয়ে গিয়ে সেই ব্যবস্থা করা হয়।’’
কিন্তু কোনও প্রশিক্ষণ বা সুরক্ষা কিট ছাড়াই কেন আশা কর্মীদের যেতে বলা হবে, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্যের আশাকর্মীরা সরব হয়েছেন। গোঘাট-২ ব্লকের আশা কর্মী সংগঠনের সম্পাদিকা প্রণতি মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বাড়ি ঘুরে ঘুরে শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত দেখার পাশাপাশি কার জ্বর হচ্ছে, যক্ষ্মা আছে কিনা সবই দেখতে হচ্ছে আমাদের। কুষ্ঠ রোগী খুঁজতে মাসে ১০০ জনের গায়ে হাত দিয়েও পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব আমাদের। এ দিকে আমাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। তার উপর কোভিড মৃতদেহ দেখার চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টা আমরা আমাদের রাজ্য সংগঠনে জানিয়েছি।” তিনি বলেন, “গতবার যদিওবা মাস্ক, স্যানিটাইজার পেয়েছিলাম, এবার তাও পাইনি। গ্লাভস, পিপিই কিট তো দূর।’’
রাজ্য আশা কর্মীদের সংগঠনের সম্পাদিকা ইসমাতারা বেগমের অভিযোগ, “গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুরোটাই আশা কর্মীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজটা করতে যে সব প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম দরকার তা পাওয়া যাচ্ছেনা। এ নিয়ে আমরা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরগুলিতে আগামী ২৫ তারিখ এবং স্বাস্থ্য ভবনে আগামী ২৮ তারিখ আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি।”
জেলার আশাকর্মীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় সরঞ্জাম সর্বত্র দেওয়া চলছে।”