E-Paper

বিক্রি কমেছে, ভাটায় পড়ে আছে ১২ কোটি ইট

এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের গোড়া থেকে ‘আবাস প্লাস যোজনা’ প্রকল্পে গ্রামে গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরির তৎপরতা শুরু করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৮
পড়ে রয়েছে ইট।

পড়ে রয়েছে ইট। —ফাইল চিত্র।

প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে এমনিতেই চাপে ছিল ইট তৈরির কারবার। তার উপরে, আবাসন দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় রাজ্যে সরকারি আবাস তৈরির কাজ বন্ধ। ফলে ইটের বিক্রিও মুখ থুবড়ে পড়ার মুখে। সব মিলিয়ে সঙ্কটে হাওড়ার শ্যামপুরের প্রায় দেড়শো ভাটা। প্রায় ১২ কোটি ইট তৈরি হয়ে পড়ে আছে বলে জানাচ্ছেন ভাটা মালিকেরা। আবাস যোজনায় জটিলতা কবে কাটবে, তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর কমার লক্ষণ নেই। এরই মধ্যে আবাস যোজনার কাজ খতিয়ে দেখতে ফের রাজ্যে আসার কথা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের। সব মিলিয়ে অচলাবস্থা কাটার ইঙ্গিত মিলছে না বলে জানাচ্ছেন ইটভাটা মালিকেরা।

শ্যামপুরের অর্থনীতি অনেকটাই ইটভাটা নির্ভর। হুগলি, রূপনারায়ণ এবং দামোদর নদের ধারে ভাটাগুলি অবস্থিত। এলাকার কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়াও, কয়েক হাজার ভিন্‌ রাজ্যের শ্রমিক আসেন ইটভাটার কাজে। কোটি কোটি টাকার লেনদেন চলে। কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

ভাটা মালিকেরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে ভাটাগুলিতে মন্দা চলছে। কারণ, এখন যে সব নির্মাণকাজ হয়, সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে সিমেন্টের ইট। প্রোমোটাররা মূলত এই ইট ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও, সরকারি যে সব ভবন তৈরি হচ্ছে, সেখানেও ব্যবহার করা হচ্ছে সিমেন্টের ইট। বহুজাতিক সিমেন্ট কারখানাগুলিই সেই ইট তৈরি করছে। তার ফলে ভাটার ইটের ব্যবহার কমছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমছে ভাটার ইটের চাহিদা।

এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের গোড়া থেকে ‘আবাস প্লাস যোজনা’ প্রকল্পে গ্রামে গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরির তৎপরতা শুরু করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে যৌথ ভাবে বরাদ্দ করা হয়। কেন্দ্রের নির্দেশে রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে। কেন্দ্র নির্দেশ দেয়, টাকা বরাদ্দ করার তিন মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। সারা রাজ্যে সাড়ে ১১ লক্ষ উপভোক্তার নাম চূড়ান্ত করা হয়।হাওড়া জেলায় প্রায় কুড়ি হাজার উপভোক্তার নাম চূড়ান্ত হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ইটের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভাটার সঙ্গে কথা বলতে। সেই
মতো বাড়তি ইটের উৎপাদন করেন ভাটা মালিকেরা।

কিন্তু প্রকল্পে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র আবাস প্লাসের টাকা বন্ধ রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত ইট প্রস্তুতকারীদের। শ্যামপুরের এক একটি ভাটায় প্রতি মরসুমে গড়ে দেড় লক্ষ করে ইট তৈরি হয়। ভাটা মালিকেরা জানালেন, আবাস প্লাসের আশায় অনেকেই বেশি করে ইট তৈরি করেছিলেন। সব পড়ে আছে। অবিক্রিত ইটের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি বলে জানান মালিকেরা।

বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ‍্যসোসিয়েশনের সহ সভাপতি তথা শ্যামপুরের ভাটা মালিক অরূপ মান্না বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ইট সরবরাহ করে মন্দা কিছুটা মেটানো যাবে। প্রশাসনকে আমরা আশ্বাস দিয়েছিলাম, আবাস প্লাস প্রকল্পে যে ইট লাগবে তার দাম বাড়ানো হবে না। উল্টে দাম কমিয়ে দিই। কিন্তু প্রকল্প থমকে থাকায় আমাদের সব আশা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম।’’

শ্যামপুরে ভাটা শ্রমিকদের নিয়ে সংগঠন চালায় ফরওয়ার্ড ব্লক। সংগঠনের নেতা অসিতবরণ সাউ বলেন, ‘‘শ্যামপুরে ইট শিল্পে নানা কারণে মন্দা দেখা দিয়েছে। আবাস প্লাসে বাড়ি তৈরি হলে মন্দা কিছুটা কেটে যেত। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের দড়ি টানাটানিতে এই প্রকল্পেও টাকা এল না।’’ তাঁর অভিযোগ, প্রকল্পে টাকা না আসায় গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে যেমন গরিব মানুষ টাকা পাচ্ছেন না, অন্য দিকে ভাটায় মন্দা চলার অজুহাতে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায‍্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন। শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি আটকে দিয়েছেন।’’

অরূপের দাবি, ভাটার পরিস্থিতি খারাপ। শ্রমিক সংগঠনগুলি যে পরিমাণ বেতন বৃদ্ধি দাবি করছে, তা মেনে নেওয়া অসম্ভব।

বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য হিসেব দিলেই কেন্দ্র টাকা ছেড়ে দেবে। সব অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের পূর্ত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, ‘‘আবাস প্লাসের টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে সরাসরি যায়। এতে হিসাব দেওয়ার কী আছে? হিসাব দেবেন যিনি টাকা নিচ্ছেন, সেই উপভোক্তা নিজে। এখানে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে টাকা আটকে রেখে এখন অবাস্তব অজুহাত
দেওয়া হচ্ছে।’’

জেলা প্রশাসনের কোনও কর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shyampur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy