E-Paper

দুর্ঘটনার পরেও নৌকায় যাত্রীদের সুরক্ষা শিকেয়

হাওড়া জেলায় বেশ কিছু ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কোথাও লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার হয় না বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫৮
লাইভ জ্যাকেট ছাড়াই চলছে নৌকা করে যাতায়াত রূপনারায়ণ নদে মানকুর ঘাটে তোলা ছবি।

লাইভ জ্যাকেট ছাড়াই চলছে নৌকা করে যাতায়াত রূপনারায়ণ নদে মানকুর ঘাটে তোলা ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনাতেও হুঁশ ফিরল কই!

বৃহস্পতিবারই রূপনারায়ণে নৌকাডুবি হয়েছে। অভিযোগ ওঠে, নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে নৌকায় যাত্রী পার করানো হচ্ছিল। অথচ, শুক্রবারও দেখা গেল, বাগনানের মানকুর ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে মোটরচালিত নৌকা চলছে। যাত্রীদের কারও লাইফ জ্যাকেট নেই।

কয়েক বছর আগে হুগলির ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় অস্থায়ী জেটি ভেঙে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুতে রাজ্য প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, যে সব ঘাটে যাত্রী-নৌকা চলে, সেখানে প্রত্যেক যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে। হাওড়ার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঘোষণা শুধু খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে।

হাওড়া জেলায় বেশ কিছু ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কোথাও লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার হয় না বলে অভিযোগ। শুক্রবার বাগনানের মানকুর ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুরে দুধকুমড়া ঘাটের দিকে মোটরচালিত নৌকায় যাত্রীরা যাচ্ছেন। যে নৌকাযর বহনের ক্ষমতা ৩০ জন, সেখানে তার চেয়ে বেশি যাত্রী তোলা হয়েছে। প্রশাসনের অনেকেই এ দিন ওই ঘাটে উপস্থিত ছিলেন আগের দিনের দুর্ঘটনার কারণে। কিন্তু তাতে যাত্রী নিরাপত্তা বাড়েনি।

জেলা সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের যে সব ঘাট আছে, সেগুলিতে প্রতি তিন মাস অন্তর পরিদর্শন করা হয়। প্রত্যেক ঘাটে যাত্রী-সুরক্ষায় লাইফ জ্যাকেট দেওয়া আছে। যাত্রীদের একাংশ ওই জ্যাকেট পরতে চান না। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, যাতে প্রত্যেক যাত্রী লাইফ জ্যাকেট পরেন। চড়ুইভাতির মরসুমে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বেশ কিছু জায়গায় নৌকাবিহার হয়,। সে সবও বন্ধ করা হবে।’’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন রূপনারায়ণে নৌকাডুবি হয়, তখন মানকুর ঘাটের পাশে বসেছিলেন ব্রজগোপাল মণ্ডল ও স্বপন বরনামে দুই মৎস্যজীবী। তাঁরা জানান, হঠাৎ দেখেন, রূপনারায়ণেরমাঝখানে নৌকায় কেউ মোবাইলের আলো জ্বেলে বাঁচানোরজন্য সাহায্য চাইছেন। কোনও কিছু না ভেবেই পার থেকে মাছ ধরার নৌকা নিয়ে তাঁরা চলে যান।

ব্রজগোপালের কথায়, ‘‘গিয়ে দেখলাম কয়েকজন হাবুডুবু খাচ্ছেন। নৌকায় থাকা একটি বাঁশ তাঁদের দিকে ছুড়ে দিই। ১১ জনকে উদ্ধার করতে পেরেছি। অনেকের গায়ের শীতবস্ত্র জলে ভারী হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। চোখের সামনে দেখলাম কয়েকজন তলিয়ে গেলেন। এক, দু’জনগ্যাস সিলিন্ডার ধরে ভাসছিলেন।অন্য নৌকা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। কিন্তু পাঁচ জনকে উদ্ধার করতে পারা গেল না।’’

মৎস্যজীবীদের বক্তব্য, ছোট নৌকায় ১৮ জন যাত্রীকে তোলাটাই মাঝির ভুল হয়েছিল। ওই নৌকার অত বহন ক্ষমতা নেই। নদীঘাটে প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘হাওড়া জেলার একমাত্র দ্বীপাঞ্চল ভাটোরা। বাগনান এবং জয়পুর থেকে নদীপথে যেতে হয় এই দ্বীপাঞ্চলে। এ ছাড়াও মানকুর থেকে নদী পার হয়ে অনেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন যান। প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।’’

এ কথা মানতে নারাজ হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘নদীঘাটগুলিতে নজরদারি নিয়মিত চালানো হয়। এরপর থেকে আরও বেশি নজরদারি চালানো হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bagnan Life jacket

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy