ক্রেতার দেখা নেই পান্ডুয়ার জিটি রোডের ধারের কাপড়ের দোকানে । নিজস্ব চিত্র।
শরৎ এসেছে। মাঠঘাটে কাশ ফুটেছে। পুজোর আর এক মাস বাকি। বাজার জমছে কই!
রবিবার বিকেলে শেওড়াফুলিতে জিটি রোডের ধারের একটি বস্ত্র-বিপণিতে দেখা গেল, দুই কর্মী ঘুমোচ্ছেন। মালিক মোবাইল ঘাঁটছেন। ক্রেতা নেই।
শুধু কি ওই দোকান! ভদ্রেশ্বর পর্যন্ত হুগলি জেলার বহু দোকানের ছবিটাই রবিবার কমবেশি এক রকমই ছিল। কোভিড-পূর্ব সময়ে যা ভাবাই যেত না! বিক্রির হাল দেখে হতাশ ব্যবসায়ীরা। সে শপিং মলই হোক বা রাস্তার ধারের ছোট বিপণি। অবশ্য গত বছরেও এ ছবি দেখা গিয়েছে।
চাঁপদানিতে একটি পোশাকের দোকানে আধশোয়া হয়ে ছিলেন এক কর্মী। কাছে যেতেই খদ্দের ভেবে উঠে বসলেন। সাংবাদিক পরিচয় জেনে বললেন, ‘‘এই সময়ে খদ্দেরের ভিড় লেগে যায়। আর এখন খদ্দেরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।’’
বেচাকেনার নিরিখে শ্রীরামপুর বাজারকে হুগলির নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বা বড়বাজার বলা যেতে পারে। এখানেও রবিবার অনেক ব্যবসায়ীকে মুখ ব্যাজার করে বসে থাকতে দেখা গেল। মেয়েদের রেডিমেড পোশাক বিক্রেতা নীলরতন সাহা বলেন, ‘‘এই সময় দিনে ২০-২৫ হাজার টাকা হেসেখেলে বিক্রি হওয়ার কথা। সিকিভাগও হচ্ছে না। রবিবারের বিক্রি আর পাঁচটা দিনের থেকে বেশি হচ্ছে না।’’ একই পরিস্থিতি পান্ডুয়া, বলাগড়ের বাজারেও।
ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, বহু মানুষের হাতে টাকা নেই। করোনা পরিস্থিতিতে কেউ কাজ হারিয়েছেন। কেউ পেশা বদল করেছেন। সব মিলিয়ে উপার্জন কমেছে। শ্রীরামপুরের পোশাক ব্যবসায়ী দুলাল রায় বলেন, ‘‘লোকের হাতে টাকা না থাকাটা এই পরিস্থিতির একটা বড় কারণ। তা ছাড়া, এখানে ট্রেনপথে বহু দূর থেকে লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন। তাঁরা আসতে পারছেন না। লোকাল ট্রেন চালু হলে কিছুটা অন্তত ভাল
হতো আমাদের।’’
জেলাসদর চুঁচুড়ায় বিভিন্ন শপিং মল ফাঁকাই ছিল। বাজার জমেনি ঘড়ির মোড়ে লাগোয়া দোকানগুলিতেও। সেখানে ছেলের জন্য জামা কিনতে এসেছিলেন ব্যান্ডেলের বাসিন্দা অরুণিমা ধর। তিনি বলেন, ‘‘করোনা আবহে সাধারণ মানুষের খুব ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ছেলের জামাটুকুই শুধু কিনলাম। নিজেদের কথা পরে ভাবব।’’ চুঁচুড়ার দেবাশিস দাস, পান্ডুয়ার কমল দেবনাথের মতো বহু ব্যবসায়ীর কথার নির্যাস— পুজো-বাজারের ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে করোনা। চাঁপদানি বাজারের রেডিমেড পোশাক বিক্রেতা সাগির আলম, জাফর শামিমরা আশায়, বিশ্বকর্মা পুজোর পরে কল-কারখানায় বোনাস হবে। তার পরে বিক্রি কিছুটা
বাড়তে পারে।
আরামবাগের পিসি সেন রোড, হাসপাতাল রোড, গৌরহাটি মোড় বা লিঙ্ক রোডের পোশাক, জুতো, ঝুটো গয়নার দোকানে কেনাকাটার জমজমাট ছবিটাও নেই। বস্ত্র ব্যবসায়ী হিমনাথ কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুজোর এক মাস আগে থেকেই রোজ গড়ে দেড়-দু’লক্ষ টাকা বিক্রিবাটা হতো। করোনার জন্য গত বছর তা ৪০-৫০ হাজারে নেমে এসেছিল। এ বার কিছুটা বেড়ে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ হয়েছে।’’
ভিড় না থাকলেও কোভিড-বিধি নিয়ে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করছে জানিয়ে এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে নজররদারি চলছে। প্রচারও চলছে। তবে নিজেদের সচেতনতাও প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy