৬ জনকে হাজত থেকে মুক্তি। প্রতীকী চিত্র।
দেড় যুগ সংশোধনাগারে কাটিয়ে মুক্তি মিলেছে ছ’জনের। কিন্তু, সমাজের মূলস্রোতে ফিরেও মুক্তির স্বাদ মিলছিল কই! পেটের ভাত জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, হাজতই ভাল ছিল। এই অবস্থায় ঠিকাশ্রমিক বা ১০০ দিনের কাজ বা খেতমজুরি জুটিয়ে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। এ বার তারা ডেয়ারি ব্যবসার ব্যবস্থা করল। তার উপরে ভিত্তি করে ধনেখালি ব্লকের প্রত্যন্ত জোলকুল রথতলার প্রান্তিক ওই ছয় গ্রামবাসী ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।
ভাস্তারা পঞ্চায়েতের ওই এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে একটি অপরাধের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন মঙ্গল হাঁসদা, সুনো সরেন, রবিলাল হাঁসদা, পান্ডার সরেন, পাঁচু হেমব্রম এবং বাদল হাঁসদা। বিচারে ২০০৪ সালে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
হুগলির প্রবেশন কাম আফটার কেয়ার অফিসার মনোজকুমার রায় জানান, করোনার সময় হাজতে আবাসিকদের মধ্যে ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তখন দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছেন, এমন আবাসিকদের একাংশকে চিহ্নিত করে মুক্তির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই সময় ওই ছ’জন বছর খানেকের জন্য প্যারোলে ছাড়া পান। সংশোধনাগারে আচার-ব্যবহার, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা প্রভৃতি বিষয়ের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট সরকারি পদ্ধতিতে পরে পুরোপুরি মুক্তি পান।
ছ’জন সংশোধনাগারে ঢুকেছিলেন যুবক বয়সে। বেরোনোর সময় তাঁরা প্রৌঢ়। প্রবেশন দফতরের আধিকারিকরা জানান, ওই ছ’জন এবং তাঁদের কয়েক জন আত্মীয়কে নিয়ে ‘জোলকুল রথতলা আদিবাসী মারাং বুরু আফটার কেয়ার গোষ্ঠী’ নামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী খোলা হয়েছে। এর মাধ্যমেই ‘ডেয়ারি ফার্মিং’-এর ব্যবস্থা করা হল। কয়েক মাস আগে ওই ছ’জনকে গরু দেওয়া হয়েছিল। পশুপালনের প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। দুধ বেচে তাঁরা আয় করছেন। গরুর পরিচর্যায় প্রাণিসম্পদ দফতরের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এ বার প্রশাসনের তরফে তাঁদের কংক্রিটের পাকাপোক্ত গোয়াল গড়ে দেওয়া হল। মনোজবাবু জানান, প্রকল্পে মোট খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার বেশি। জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি বিভাগ এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম টাকা দিয়েছে। স্বনির্ভর দফতরের অবদান ১০ লক্ষের বেশি।
বৃহস্পতিবার ওই ছ’টি গোয়াল উদ্বোধন হল। মনোজবাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য প্রবেশন কাম আফটার কেয়ার অফিসার রতনকুমার ভদ্র, জেলার স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের আধিকারিক রাখি বিশ্বাস, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান শ্রাবণী পাত্র প্রমুখ।
সুনো, রবিলালরা জানান, স্বনির্ভরতার ব্যবস্থায় তাঁরা নতুন ভাবে বাঁচার রসদ পাচ্ছেন। আশার আলো দেখছেন পরিবারের লোকেরাও। মনোজ বলেন, ‘‘অপরাধীদের সংশোধন ও পুনর্বাসন আমাদের দফতরের মূল লক্ষ্য। সংশোধনাগার থেকে ফেরার পরে অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা কাটিয়ে সামাজিক ও মানসিক ভাবে তাঁরা যাতে ভাল থাকতে পারেন, সেই চেষ্টাই করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy