Advertisement
E-Paper

ধানের ‘অভাবী বিক্রি’ হুগলিতে

অথচ, হুগলির বিভিন্ন খেত থেকে এখনই আলু বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছ’টাকা কেজি দরে।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ০৭:০৪
গোঘাটের কামারপুকুর ডাকবাংলোতে চলছে ধান কেনা।

গোঘাটের কামারপুকুর ডাকবাংলোতে চলছে ধান কেনা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

আলুর পরে ধান। ফের হুগলিতে ‘অভাবী বিক্রি’র কথা!

রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে। বাজারের চেয়ে বেশি দাম মিলছে। তা সত্ত্বেও হুগলি জেলার চাষিরা ‘অভাবী বিক্রি’ শুরু করেছেন। সে কথা মানছেন গোঘাটের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারও।

সরকার চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনাও শুরু করেছে। দর কেজিপ্রতি ৬ টাকা। অথচ, হুগলির বিভিন্ন খেত থেকে এখনই আলু বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছ’টাকা কেজি দরে। চাষিরা মনে করছেন, সরকারি দর তো ‘অভাবী বিক্রি’রই নামান্তর।

রাজ্যের অন্যতম ধান ও আলু উৎপাদক জেলা হুগলি। আলুর ক্ষেত্রে চাষিদের আপত্তি সরকারি দাম নিয়ে। ধানের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত। সর্বত্র চাষিদের হাতের কাছে ধান বিক্রির সরকারি কেন্দ্র (সিপিসি) নেই। ফলে, তাঁদের যেতে হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু কৃষি উন্নয়ন সমিতি বা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছে। কিন্তু ওই দু’ক্ষেত্রেই আবার চাষিপিছু ধান কেনার ‘কোটা’ (লক্ষ্যমাত্রা) বেঁধে দিয়েছে সরকার। ফলে, বাড়তি ধান নিয়ে চাষিরা কী করবেন? যাচ্ছেন খোলা বাজারে। অনেক চাষি আবার সরকারের কাছে ধান বিক্রির দীর্ঘদিন পরেও টাকা না-পাওয়ার অভিযোগ তুলছেন।

বাজারে ধানের দাম কুইন্টালপ্রতি ১৪৫০-১৪৮০ টাকা। সেখানে সরকারি দর ১৮৬৮ টাকা (সিপিসি-তে দিলে বাড়তি ২০ টাকা উৎসাহ-ভাতা)। ডিসেম্বরের গোড়া থেকে সরকার ধান কেনা শুরু করেছে। জেলায় মোট ২৫টি সিপিসি হয়েছে। গোড়া থেকেই এত কম সিপিসি নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন চাষিরা। সেই ক্ষোভ ক্রমবর্ধমান।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমের হয়ে সমবায় এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ধান কেনার বরাত পাওয়ায় চাষিরা ভেবেছিলেন মুখরক্ষা হবে। কিন্তু তা-ও হয়নি। সব চাষি সেখানে তাঁদের সব ধান বেচতে পারছেন না।

গোঘাটের হাজিপুরের চাষি শ্যামল কর্মকারের কথাই ধরা যাক। সিপিসি হয়েছে তাঁর গ্রাম থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরে, কামারপুকুরে। কাছাকাছি সমবায় সমিতি ধান কেনার বরাত পায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘ধান তুলেই কিছুটা বিক্রি না করে উপায় থাকে না। শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে ফের আলু চাষের ব্যবস্থা করতে ধান বিক্রি করতেই হয়। ধান কেনার সরকারি পরিকাঠামো না-থাকায় বাজারে ধান বিক্রি করে দিতে হল। মাত্র দু’হাজার টাকা লাভ হল। তাতে আর কী হয়?’’

বৈদ্যবাটীর চক গোয়ালাপাড়ার চাষি কেশবচন্দ্র ধোলে বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বৈদ্যবাটী-শেওড়াফুলি নিয়ন্ত্রিত বাজার চত্বরে ধান কেনার ব্যবস্থা ছিল। এখন বন্ধ। সিঙ্গুরের তাপসী মালিক কৃষক-মান্ডিতে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করে এসেছি। কিন্তু ৪৫ কুইন্টাল নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ ২৭ কুইন্টালের বেশি ধান নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে। বাকি ধান প্রায় ৪০০ টাকা কম দামে বাজারে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই।”

ভোটের মুখে ফসলের ‘অভাবী বিক্রি’ নিয়ে চাষিদের এই শোরগোলে দিশেহারা শাসকদল। গোঘাটের বিধায়ক মানসবাবু এবং আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বিষয়টা নিয়ে খাদ্য দফতরে দরবার করেছেন বলেও জানান। ধান কেনার পরিকাঠামোর অভাবের কথা মানছেন মানসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সমবায় এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ধান কেনার বরাত ৫০০ কুইন্টাল থেকে খুব বেশি হলে ৪ হাজার কুইন্টাল। একজন চাষি সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল ধান দিতে পারবেন। ফলে, বেশি চাষির ধান নেওয়া হচ্ছে না। অথচ, এক-একটি সমবায়ের অধীনে ৪০০-১৫০০ চাষি আছেন। বাকিরা বাধ্য হয়ে খোলা বাজারে অভাবী বিক্রি করছেন। মন্ত্রীর কাছে কোটা বাড়ানোর পাশাপাশি যাতে দ্রুত চাষিদের টাকা পরিশোধ করা হয়, সেই বিষয়টাও দেখতে আবেদন করেছি।’’

বিধায়ক চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেও পঞ্চায়েতে, ব্লক প্রশাসনে, সমবায়ে বিক্ষোভ থেমে নেই। উঠছে কেনার ‘কোটা’ বাড়ানোর দাবি। গোঘাট-২ ব্লকের বদনগঞ্জ-ফলুই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার স্বরূপ সাহানা বলেন, ‘‘আমাদের ন্যূনতম চাহিদা ছিল অন্তত ১০ হাজার কুইন্টাল ধান কেনার। বরাত পেয়েছি ৩৭০০ কুইন্টালের। প্রতিদিন চাষিদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে।”

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগমের জেলা ক্রয় ম্যানেজার অনিমেষ পাত্র বলেন, “এখনও অব্দি আমাদের কোটা ৩০ হাজার টন। নতুন করে কোনও কোটা পুনর্বিবেচনা হয়নি। আমাদের এলাকায় ধান আছে। চাষিরা ধান বিক্রি করতে চাইছেন বলে বিষয়টা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

Rice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy