Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
৩০ কোটি টাকার সংস্কারকাজ কার্যত জলে
Pollution at Kana Damodar River

কানা দামোদরে দূষণ তীব্র, সঙ্কটে চাষাবাদ

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির মানুষ এবং কারখানা-মালিক খালে অবাধে বর্জ্যে ফেলছেন। তাতেই জলে দূষণ ছড়াচ্ছে। একই বক্তব্য স্থানীয় পরিবেশকর্মী সৌরভ দত্তেরও।

কানা দামোদর খাল। জগৎবল্লভপুরের মাজুতে। 

কানা দামোদর খাল। জগৎবল্লভপুরের মাজুতে।  —নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯
Share: Save:

বছর ছয়েক আগে প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করে জগৎবল্লভপুরে কানা দামোদর খাল সংস্কার করেছিল সেচ দফতর। কিন্তু খালপাড়ের বাসিন্দারা বেশিদিন স্বস্তি পেলেন না। অবাধে বর্জ্য পড়ায় এখন এই খালের জল মারাত্মক দূষিত হয়েছে পড়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। জল কালো হয়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ, দূষিত জলে তাঁরা চাষ করতে পারছেন না।

খালটির যে সব জায়গায় দূষণ বেশি, তার মধ্যে রয়েছে মাজু। সেখানকার বাসিন্দারা পরিবেশ সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শুক্রবার ওই সংগঠনের প্রতিনিধিরা মাজু গ্রামে আসেন। তাঁরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘প্রাথমিক রিপোর্ট যা পেয়েছি, তাতে সমস্যা গুরুতর। আমরা এই রিপোর্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং সেচ দফতরের কাছে পাঠাব। তারা প্রতিকার না করলে আন্দোলনে নামব।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে সমস্যাটি খতিয়ে দেখে সংস্লিষ্ট দফতরগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে।

কানা দামোদরের সঙ্গে মূল দামোদর নদের কোনও সরাসরি সম্পর্ক নেই। ডিভিসি-র একটি নিকাশি খাল হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়। বর্ষাকালে চাষের কাজে এই খালের জল ব্যবহার করা হয়। খালের বিস্তার হাওড়া জেলায় প্রায় ২৯ কিলোমিটার। তার মধ্যে ১৪ কিলোমিটার রয়েছে জগৎবল্লভপুরে। বাকি ১৫ কিলোমিটার পাঁচলা এবং উলুবেড়িয়া ২ ব্লকে। উলুবেড়িয়ায় খালটি হুগলি নদীতে গিয়ে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্যল বেশি হওয়ায় জেলায় খালটিকে নদী বলা হয়। এটির আরও একটি নাম কৌশিকী। একসময়ে পুরো খালটিই মজে গিয়েছিল। দুই পাড় জবরদখল হয়ে যায়। ২০১৭ সালে জগৎবল্লভপুরের অংশে সেচ দফতর সংস্কার করে। পুলিশের সাহায্যে খালের পাড় জবরদখলমুক্ত করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির মানুষ এবং কারখানা-মালিক খালে অবাধে বর্জ্যে ফেলছেন। তাতেই জলে দূষণ ছড়াচ্ছে। একই বক্তব্য স্থানীয় পরিবেশকর্মী সৌরভ দত্তেরও। মাজুর বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র ঘোষাল বলেন, ‘‘আমরা সবুজ মঞ্চের দ্বারস্থ হওয়ার আগে সেচ এবং পরিবেশ দফতরের কাছেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলাম। কোনও কাজ হয়নি। দূষণ বেড়ে যাওয়ায় এই নদী আমাদের কোনও কাজে লাগছে না। উল্টে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে।’’

খালটি সেচ দফতরের নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তি-১ বিভাগের অধীন। এই বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা খালের এই পরিণতির জন্য বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন। তাঁদের বক্তব্য, নদীতে যাতে দূষণ না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব এলাকার মানুষেরও। তাঁরাই যদি নদীতে
যত্রতত্র বর্জ্যে ফেলেন তা হলে আর কী করার আছে?

নব দত্ত পাল্টা বলেন, ‘‘বড় নদীর দূষণ রোধ করতে পরিবেশ দফতর কড়া ব্যবস্থা নেয়। ছোট নদী ও খালগুলির দূষণ রোধে সেই উদ্যোগের অভাব আছে। পরিবেশ দফতর ও সেচ দফতর এ ব্যাপারে উদসীন। ছোট নদী ও খালের দূষণ বন্ধ করতে সরকারের কোনও পরিকল্পনাই নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jagatballavpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE