E-Paper

আলুর দাম অমিল, ভতুর্কির দাবি চাষির

উত্তরবঙ্গ থেকে আলু দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে কেন? ব্যবসায়ীরা জানান, গত মরশুমে দক্ষিণবঙ্গে আলু কম হলেও উত্তরবঙ্গে ভাল হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রচুর আলু অসমে যায়।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২০
An image of Potato

আলুর বস্তা তোলা হচ্ছে হিমঘরে। —নিজস্ব চিত্র।

খুচরো বাজারে দাম খুব একটা কমেনি। তা সত্ত্বেও আলু বেচে দাম পাচ্ছেন না চাষি। পরিস্থিতি এমন, লোকসান ঠেকাতে হিমঘরের ভাড়ায় ভর্তুকির দাবি তুলছেন তাঁরা।

রাজ্যের হিমঘরে ৫৫ শতাংশ আলু এখনও মজুত। ভিন্‌ রাজ্যে সরবরাহে গতি নেই। মাস দুয়েক ধরে উত্তরবঙ্গের অবিক্রিত প্রচুর আলু দক্ষিণবঙ্গের মূল আলু উৎপাদক জেলাগুলির হিমঘরে ঢুকছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গে আলুর বাজার পড়তির দিকে। সেই ফাঁকে এক শ্রেণির ফড়ে লাভের গুড় খেয়ে নিচ্ছে।

রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘পরিস্থিতি জানিয়ে কোনও কৃষক সংগঠন আর্জি জানালে তাদের দাবি বিবেচনা করা হবে।’’ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার কলকাতায় বৈঠকে বসেন রাজ্যের হিমঘর-মালিক সংগঠনের কর্তারা।

উত্তরবঙ্গ থেকে আলু দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে কেন?

ব্যবসায়ীরা জানান, গত মরশুমে দক্ষিণবঙ্গে আলু কম হলেও উত্তরবঙ্গে ভাল হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রচুর আলু অসমে যায়। এ বার অসমের প্রয়োজন মেটাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ। ফলে, উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত আলুর একটি বড় অংশই অবিক্রিত। কিছুটা বাধ্য হয়ে জলপাইগুড়ি, মালদহ, ধুপগুড়ি, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের চাষিরা দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, পূর্ব বর্ধমান বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার হিমঘরে আলু পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাজার ধরার আশায়। সেই বাড়তি চাপে হিমঘরে প্রচুর আলু থেকে যাচ্ছে।

প্রতি মাসে রাজ্যে ৮ লক্ষ টন আলুর প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর— চার মাসে লাগবে ৩২ লক্ষ টন। গত মরসুমে রাজ্যে ৭৫-৭৮ লক্ষ টন আলু হয়। চাষি ও ব্যবসায়ীদের ধারণা, ভিন্‌ রাজ্যে পাঠাতে না পারলে ডিসেম্বরের মধ্যে হিমঘর খালি হবে না।

তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙার চাষি রামচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘চাষে যে খরচ হয়েছিল, সেই দামই উঠছে না। চন্দ্রমুখী ও জ্যোতি আলুর দাম পাচ্ছি বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) যথাক্রমে ৬৫০ এবং ৫০০ টাকা। লোকসান হচ্ছে। রাজ্য সরকার আমাদের হিমঘরের ভাড়ায় ভর্তুকি দিক। না হলে, আগামী মরশুমে চাষ করতে পারব না।’’ তারকেশ্বরেরই রামনগরের চাষি অনুপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আলুর ফলন ভাল না-হওয়ায় ভাল দামের আশা ছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গের প্রচুর আলু ঢুকছে সিঙ্গুর, তারকেশ্বরে। এখন সরকার হিমঘরের ভাড়ায় ভর্তুকি দিলে ভিন্‌ রাজ্যে আলু পাঠানোর চেষ্টা করতে পারি। না হলে বিপদ।’’

রাজ্য আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আলুর দাম পাচ্ছেন না চাষি। আগামী মরশুমে তাঁরা চাষ করবেন কী ভাবে? হিমঘরের ভাড়ায় ভতুর্কির দাবি যুক্তিসঙ্গত।’’

হিমঘর মালিক সংগঠনের কর্তা পতিতপাবন দে’র দাবি, রাজ্যের হিমঘরগুলি থেকে ৪৬ শতাংশ আলু বেরিয়ে গিয়েছে। গতবার এই সময় ৭-৮ শতাংশ কম বেরিয়েছিল। এক হিমঘর মালিকের বক্তব্য, ‘‘উত্তরপ্রদেশ সরকার পরিবহণে ভর্তুকি দিয়ে ওড়িশা, অসমে আলু পাঠাচ্ছে। দুই রাজ্যেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচুর আলু যেত। সেই বাজার উত্তরপ্রদেশ দখল করছে। রাজ্যের উচিত, চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভিন্‌ রাজ্যে আলু পাঠাতে উৎসাহ জোগাতে পরিবহণে ভর্তুকি দেওয়া।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Potato Price Chinsurah Farmers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy