Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Untimely Rain

অসময়ের বৃষ্টিতে ডুবল জমি, ক্ষতি আলু ও ধানে

চাষিরা জানাচ্ছেন, যাঁরা এখনও মাঠে আলু লাগাননি তাঁদের চাষ এ বার যথেষ্ট বিলম্বিত হবে। কারণ, ভিজে মাটিতে আলু চাষ শুরুই করা যায় না।

-

ভেজা ধান ঘরের তোলার তোড়জোড় উলুবেড়িয়ার বহিরায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া, চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪০
Share: Save:

মিগজাউমের জেরে বুধবার রাত থেকেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল হাওড়া ও হুগলিতে। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাত্রা বেড়েছে বৃষ্টির। দুই জেলাতেই এই সময় আমন ধানের পুরোটা মাঠ থেকে ওঠেনি। যে সব জমির ধান উঠেছে, সেগুলিতে সবে দিন সাত-দশেক হল আলু লাগানো শুরু হয়েছে। আলুর গাছ গজানো এখনও শুরু হয়নি। এই অবস্থায় নিম্নচাপের এই বৃষ্টিতে আলু বীজ সবই পচে নষ্টের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। পাশাপাশি মাঠে পড়ে থাকা ধান এবং শীতকালীন আনাজে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘জেলায় আলু জমির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয়। তবে বৃষ্টিতে আলুর জমির ক্ষতি ঠেকানো যাবে না বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান।’’

চাষিরা জানাচ্ছেন, যাঁরা এখনও মাঠে আলু লাগাননি তাঁদের চাষ এ বার যথেষ্ট বিলম্বিত হবে। কারণ, ভিজে মাটিতে আলু চাষ শুরুই করা যায় না। চাষের জমি শুকিয়ে আলুর উপযোগী করে তুলতে এখন বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। তাঁরা এই বৃষ্টির ধাক্কা কোনওক্রমে সামলে নিলেও মূল সমস্যা তাঁদের, যাঁরা বহু টাকা খরচ করে জমিতে আলু ইতিমধ্যেই বসিয়ে ফেলেছেন। কারণ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আলুর জমিতে যে পরিমাণ জল জমেছে, তাতে আলু মাঠেই পচবে।ওই জমিতে ফের আলু চাষ করতে হলে আবার নতুন করে জমি তৈরি করে কাজ করতে হবে। তাতে খরচ বাড়বে।

এ দিকে আলু বীজের দাম রাতারাতি বেড়ে গিয়েছে বলে চাষিদের অভিযোগ। অনেকে জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত বস্তা পিছু আলু বীজের দাম গিয়েছে ১২০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার সকালে সেই দাম দাঁড়িয়েছে ২০০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা। এর ফলে বাজারে আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না চাষিরা।

জলে ডুবে থাকা জমিতে দাঁড়িয়ে গোঘাটের চকহরি গ্রামের আলু চাষি রফিক আহমেদ খানের বিলাপ, “ তিন বিঘা জমির আলুর দফারফা হয়ে গেল। দিন সাতেকও হয়নি আলু লাগিয়েছি। সেচের জন্য টানা নালাগুলো জলে ডুবে থেকে জমির সঙ্গে সমান হয়ে গিয়েছে। আলুর বীজ সবই পচে যাবে।” পান্ডুয়ার ভায়রা গ্রামের আলুচাষি অমিতাভ কোলের কথায়, ‘‘৫০ বিঘা জমির মধ্যে ১১ বিঘাতে আলু বসানো হয়েছে। সেগুলো সব পচে যাবে।’’ ধনেখালির সোমসপুরের চাষি মহিনুদ্দিন মল্লিক বলেন,‘‘জমানো টাকা আলুচাষে খরচা করে ফেলেছি। সব জলে গেল। ফের চাষের মতো আর সম্বল নেই।’’

শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের চক ও দীর্ঘাঙ্গ মৌজার মাঠে খরিফ মরসুমের ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। জমিতে এখনও জল না জমলেও, দ্রুত আবহাওয়া পরিবর্তন না হলে ধানের ফলনের ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন এলাকার চাষিরা। অন্য দিকে, পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের উত্তর রাজ্যধরপুর ও চাঁপসারা গ্রামের শীতের মরসুমের ঢেঁড়স, কড়াইশুঁটি, সর্ষে জমিতে জল জমে যাওয়ায় বীজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই দুরবস্থা পেঁয়াজ চাষেও।

বৃহস্পতিবার থেকেই উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিমাপের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান হুগলি জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মদনমোহন কোলে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের শস্য বিমা যোজনায় নাম নথিভুক্ত করার কাজও চলছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী শুক্রবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়তে পারে ধরে নিয়েই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধারা। তাঁর দাবি, বিমার আওতাধীন যারা নয়, তাঁদের ক্ষতিপূরণ নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

হাওড়া জেলার চাষিদের অবস্থা তথৈবচ। পাতিহালের চাষি রমেশ পোড়েল প্রায় ৩০ বিঘে জমিতে খরিফ ধান চাষ করেছেন। তিনি জানান, ফসলের অধিকাংশটাই কাটা হলেও জমিতে পড়ে রয়েছে কিছুটা। সেটা নষ্ট হবে বলেই আশঙ্কা তাঁর জগৎবল্লভপুর ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ব্লকের ৬ হাজারের বেশি জমিতে খরিফ ধান চাষ হয়েছে এবং ১ হাজারের বেশি জমিতে রবি ফসলের চাষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এলাকা পরিদর্শনের পর কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ খরিফ ধানের প্রায় ৭০ শতাংশ চাষিরা তুলে নিয়েছেন। কেটে মাটিতে ফেলে রাখা ধান নষ্ট হবে। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতিও বাড়বে।’’ তবে রবি চাষের ফসল যেমন সর্ষে, কপি, যেগুলো একটু বড় হয়ে গিয়েছে, তাদের জন্য এই বৃষ্টি লাভজনক বলেই তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato farmers Chinsurah Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE