Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

গাছ বিক্রি করে কত টাকা? উত্তর অমিল

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জেলায় নতুন করে ৩ লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছে।

আমপানে এ ভাবেই গাছ পড়েছিল শ্যামপুর গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রে।

আমপানে এ ভাবেই গাছ পড়েছিল শ্যামপুর গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রে। ফাইল চিত্র।

নুরুল আবসার এবং সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

আমপানে হাওড়ায় মোট কত গাছ ভেঙে পড়েছিল তার কোনও হিসেব নেই জেলা বন দফতরের কাছে। এমনকি, সেগুলি বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া গিয়েছে সে বিষয়ও তাঁরা কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন জেলা বন দফতরের কর্তারা। তবে, জেলা প্রশাসন দাবি করেছে, আমপানে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার গাছ ভেঙে পড়েছিল। তার ভিত্তিতেই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জেলায় নতুন করে ৩ লক্ষ গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু ভেঙে পড়া গাছ বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া গিয়েছে সেই হিসেব জেলা প্রশাসনও দিতে পারেনি।

জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং বিভিন্ন পঞ্চায়েত সরকারি জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ নিয়ম মেনে নিলাম করে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে কোনও দুর্নীতি নেই।’’

জেলা বনাধিকারিক রাজু সরকার জানান, হাওড়ায় সরকারি জমির গাছের মালিকানা বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন, পূর্ত এবং সেচ দফতরের। ফলে, ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের সংখ্যা বা সেগুলি যদি বিক্রি হয় তার সবিস্তার তথ্য ওই সব দফতরই দিতে পারবে।

কিন্তু ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ সরানো বা বিক্রি করতে গেলে তো বন দফতরের অনুমতি লাগবে। সেই ধরনের কত অনুমতি তাঁদের কাছে চাওয়া হয়েছে? রাজুবাবু বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ কিছু গাছ বিক্রির জন্য নিলাম করে। সেই অনুমতি আমরা দিয়েছি। আর কোনও অনুমতি আমাদের কাছে কেউ চায়নি।’’

জেলা পরিষদের অধীন গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রে আমপানে বহু গাছ পড়ে যায়। সেই গাছ নিলামে বিক্রি করে জেলা পরিষদ প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পেয়েছে। নিলামের জন্য গাছের মূল্যায়ন করে দেয় বন দফতর। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গাছ বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা দিয়ে পর্যটনকেন্দ্রেই নতুন করে গাছ লাগানো হবে এবং এখানকার আরও উন্নয়ন করা হবে।’’

জেলা পরিষদ টাকার হিসেব দিলেও পঞ্চায়েত সমিতিগুলি তা দিতে পারেনি। আমপানে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল শ্যামপুর-২ ব্লক। এখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার মোল্লা বলেন, ‘‘সরকারি বনসৃজন প্রকল্পে লাগানো বহু গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে, আমরা নিজেরা কোনও গাছ বিক্রি করিনি। পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছিল, তারা নিলাম করে গাছ বিক্রি করে সেই টাকায় যেন নিজস্ব সম্পদ বাড়িয়ে নেয়। তারা সেটাই করেছে। কোথাও কোনও বেনিয়মের অভিযোগ আসেনি। তবে গাছ বিক্রি করে পঞ্চায়েতগুলির কোষাগারে কত টাকা এসেছে সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই।’’

প্রায় একই মন্তব্য করেছেন জেলার বাকি পঞ্চায়েত সমিতিগুলির কর্তারা। গাছ বিক্রি করে কত টাকা এসেছে তার কোনও হিসাব দিতে পারেননি জেলার পূর্ত বা সেচ দফতরের কর্তারাও।

আবার আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন গাছকেও খাতায়-কলমে ভেঙে পড়া দেখিয়ে বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাটে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং শঙ্কররহাটি-১ পঞ্চায়েতের কর্তাদের একাংশের যোগসাজশে সেখানে পূর্ত দফতরের জমিতে থাকা একটি দেবদারু, একটি অশ্বত্থ এবং একটি পাকুড় গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন গ্রামবাসী। কিন্তু পূর্ত দফতর বন দফতরের কাছে কোনও অভিযোগ না জানানোয় ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ‌জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতি এবং ওই ওই পঞ্চায়েতের কর্তারা গাছ কাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE