Advertisement
২০ মে ২০২৪
Garbage Burning

হুগলির নানা শহরের আকাশে বিষ-ধোঁয়া, বর্জ্যে আগুন অব্যাহত, প্রতিকার নিয়ে প্রশ্ন

এ ক্ষেত্রে প্রশাসন বা পুরসভার আধিকারিকরা কয়েক বছরের পুরনো স্তূপীকৃত বর্জ্যের (লিগ্যাসি ওয়েস্ট) দোহাই দিচ্ছেন।

উত্তরপাড়ার আবর্জনায় আগুন। ফাইল চিত্র

উত্তরপাড়ার আবর্জনায় আগুন। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৩
Share: Save:

দাউ দাউ করে জ্বলছে আবর্জনা। জঞ্জালের পাহাড় থেকে ওঠা ধোঁয়া আকাশ ঢেকে দিচ্ছে। হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় এ ছবি রোজকার। বর্জ্য-পোড়া ধোঁয়া বিষ ছড়াচ্ছে বাতাসে। মাটি, জলও দূষিত হচ্ছে। মানছে প্রশাসনও।

প্রতিকার না-মেলায় উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। শুক্রবার উত্তরপাড়ার মাখলায় আবর্জনার আগুনের ধোঁয়া যে ভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল, ফের কোথাও এমন হবে না তো! এ প্রশ্নও ভাবাচ্ছে। জেলার ছয় শহরে (উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটী ও চাঁপদানি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প রয়েছে। তা সত্ত্বেও, উত্তরপাড়ায় জঞ্জালের স্তূপ থাকছে কেন, এমন নানা প্রশ্নও ঘুরছে।

এ ক্ষেত্রে প্রশাসন বা পুরসভার আধিকারিকরা কয়েক বছরের পুরনো স্তূপীকৃত বর্জ্যের (লিগ্যাসি ওয়েস্ট) দোহাই দিচ্ছেন। উত্তরপাড়া পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, দৈনন্দিন উৎপাদিত বর্জ্য প্রকল্পে পাঠানো হয়। তবে, জমে থাকা পুরনো আবর্জনা সরানো যায়নি। আগুন সেখানেই লেগেছিল। প্রকল্প রয়েছে, এমন পুরসভায় যখন এই অবস্থা, অন্যান্য শহরের পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়।

জেলা পুর উন্নয়ন আধিকারিক ভাস্কর মজুমদারের বক্তব্য, দীর্ঘদিন জমে থাকা বর্জ্যে রাসায়নিক পচনে মিথেন ইত্যাদি গ্যাস বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে আগুন লাগতে পারে। হুগলিতে অধিকাংশ পুরনো শহরে ভাগাড় লোকালয়ের মধ্যে। ২০১৬ সালের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী প্রত্যেক পুরসভাকে পুরনো বর্জ্যের জন্য একটি করে জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। সেখানে প্রতিস্থাপন প্রকল্প থাকবে। অনেকগুলি পুরসভায় ওই জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে। তারকেশ্বর ও আরামবাগে তা চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

আরামবাগে দ্বারকেশ্বর নদের চর পুরসভার আবর্জনা ফেলার জায়গা। প্রায়ই তাতে আগুন লাগে। পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারী বলছেন, ‘‘শহরে দৈনিক কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ হাজার টনের বেশি। গরু চড়াতে এসে ছেলেরা আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে সম্ভবত। প্রকল্প তৈরির কাজ মাস দুয়েকেই শুরু হবে। সমস্যা মিটবে।’’

ডানকুনির অবস্থাও খুব খারাপ। এখানে শুধু বসতি নয়, কল-কারখানার বিপুল পরিমাণ বর্জ্য রয়েছে। অভিযোগ, সবটাই ফেলা হয় রাস্তার পাশে। ইচ্ছেমতো পুড়িয়েও দেওয়া হয়। চুঁচুড়ার সুকান্তনগর ভাগাড়ে, চন্দননগরে জঞ্জালের পাহাড়ে আগুন চেনা দৃশ্য। আগুন বড় হলে দমকলের ডাক পড়ে।

পরিবেশকর্মীদের একাংশের মতে, ইচ্ছাকৃত ভাবে জঞ্জালে আগুন লাগানো হলে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেখানে-সেখানে জঞ্জাল ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্জ্যের আগুন থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড মারাত্মক ভাবে বেড়ে যায়। অক্সিজেন কমে। প্লাস্টিক পোড়া বাতাস শরীরে গেলে, ক্যানসারও হতে পারে। লোকদেখানো প্রকল্প না গড়ে জনপ্রতি বর্জ্যের হিসাব করে তা করা দরকার।’’

প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, শুধু বর্তমানের কথা ভেবে প্রকল্প গড়লেই হবে না। দরকার, পুরনো আবর্জনা দ্রুত ব্যবস্থাপনার উপায় বের করাও। প্রকল্প গড়ার কয়েক বছর পরেও রিষড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি পুরসভা বাড়ি থেকে আবর্জনা পৃথক করার বন্দোবস্ত করে তুলতে পারেনি। উত্তরপাড়া, কোন্নগরে তা আংশিক ভাবে হয়। বৈদ্যবাটীর হাল তুলনায় অনেক ভাল।

পরিবেশকর্মী এবং বিভিন্ন পুরসভায় জঞ্জাল অপসারণের কাজে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশের আক্ষেপ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ কার্যত উদাসীন। যেটুকু দৌড়ঝাঁপ, সরকারি দফতরের নির্দেশিকার ঠেলায়। নির্দেশিকা এলেও সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তার তত্বাবধান প্রশাসন সঠিক ভাবে করে না। ফলে, কাজ কত দূর এবং কত দ্রুত এগোবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই। তার উপরে নির্ভর করছে জনস্বাস্থ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garbage Burning Hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE