দু’জনের মৃত্যুতে কি টনক নড়ল পূর্ত দফতরের? বালির জিটি রোড এবং সংলগ্ন রাস্তার যেখানে খারাপ অবস্থা, শুক্রবার রাত থেকে সেখানে সংস্কারের কাজ শুরু করল প্রশাসন। পূর্ত দফতরের হাওড়া ডিভিশনের আধিকারিকদের দাবি, আগেই সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দিনের পর দিন হাওড়ার ‘লাইফলাইন’-এ এমন মৃত্যু-ফাঁদ তৈরি হয়ে থাকলেও তা এত দিন প্রশাসনের নজরে আসেনি কেন? যদি প্রশাসন সবটাই জানত, তা হলে সংস্কারের কাজ কিসের জন্য আটকে ছিল? দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংস্কার শুরু হওয়ায় এই প্রশ্নগুলি থেকেই যাচ্ছে।
বুধবার রাতে দেওয়ানগাজি এলাকার জিটি রোডে বেপরোয়া গতিতে চলা সিমেন্ট মিক্সিং ট্রাক উল্টো দিক থেকে আসা ট্যাক্সিতে ধাক্কা মেরে সেটিকে প্রায় ৫০ মিটার পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে একটি বাড়ি ভেঙে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলের কাছে রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে থাকা গর্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনেকেরই দাবি, অত্যধিক গতি থাকায় ওই গর্তের কাছে এসে ট্রাকটি ডান দিকে ঘুরে সজোরে ধাক্কা মারে ট্যাক্সিতে। জিটি রোড জুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে রয়েছে এমনই অসংখ্য ছোট-মাঝারি গর্ত। কোথাও সেই গর্তে চাকা পড়ে এক দিকে হেলে যাচ্ছে যাত্রী-বোঝাই বাস বা মালবাহী লরি, কোথাও গর্ত বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে অটো, টোটো কিংবা মোটরবাইককে বিপজ্জনক ভাবে বড় গাড়ির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
যেমন, বালি সেতু সংলগ্ন বালিঘাট স্টেশনের সামনে তিন রাস্তার সংযোগস্থলের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে পাথরকুচি। এবড়োখেবড়ো রাস্তায় দুলকি চালে চলছে সব গাড়ি। রাতে জাতীয় সড়ক থেকে ভারী লরি ওই রাস্তা দিয়েই জিটি রোডে নেমে এসে হাওড়ার দিকে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাতে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। একই অবস্থা জিটি রোডে বালিঘাট স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনেও। আবার, জিটি রোড সংস্কারের জন্য বালি নিমতলার সামনে থেকে বালি দমকল কেন্দ্র পর্যন্ত এমন ভাবে রাস্তা চাঁছা হয়েছে যে, বাইক চলতে গেলে কাঁপতে থাকে। খানাখন্দে ভর্তি লিলুয়া রেল কলোনির সামনের জিটি রোডও। বিক্ষিপ্ত এলাকা জুড়ে এমন অবস্থা তৈরি হলেও নিয়মিত নজরদারি হয় না কেন? পুলিশ সূত্রের দাবি, বেশ কয়েক বার পূর্ত দফতরকে বিষয়টি জানানো হলেও রাস্তার ‘ক্ষত’ সারেনি।
স্থানীয় ভাবে পুর প্রশাসনেরও কি কোনও ভূমিকা নেই? বালি পুরসভার আধিকারিকদের দাবি, জিটি রোড রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। তা-ও দিনকয়েক আগে দমকল কেন্দ্রের সামনের গর্ত ভরাট করেছে পুরসভা। কিন্তু পুর এলাকার মধ্যে দিয়ে যে হেতু জিটি রোড গিয়েছে, সেখানে সংস্কারের বিষয়ে পুরসভা ও পূর্ত দফতরের সমন্বয় থাকবে না কেন?
এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘জিটি রোডের ধারের নিকাশি সংস্কারের সময়ে কিছু জানানো হয়নি। পরে দেখা গেল, নালা এতটাই উঁচু করা হয়েছে যে, বর্ষায় রাস্তায় জল জমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ যদিও অভিযোগ, পানীয় জলের লাইন বা বিদ্যুতের কেবল বসানোর জন্য রাস্তা খোঁড়া হলেও তা সংস্কার করা হল কিনা, সে দিকে যথাযথ নজরদারি নেই পুরকর্মীদের একাংশের।
প্রশ্ন হল, জিটি রোডের ‘ক্ষত’ মেরামতি শুরু হলেও, তা কত দিন টিকবে? অন্যত্র গর্ত তৈরি হলে তা সংস্কারের জন্য ফের কি দুর্ঘটনার অপেক্ষা করতে হবে?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)