আতঙ্কিত স্থানীয়দের জটলা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ফুল-মালায় খাট সাজিয়ে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার পথে আচমকা পরিজনদের পথরোধ করে দাঁড়ালেন পুলিশের পদস্থ আধিকারিক। তাঁর নির্দেশে বছর বিয়াল্লিশের অমৃত বর্মার দেহ খাট থেকে নামিয়ে তোলা হল পুলিশের গাড়িতে!
বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থানার সামনে এমন ঘটনায় চিৎকার করে ওঠেন অমৃতের ক্ষুব্ধ পরিজনেরা। মৃতের বৌদি গুড়িয়া বর্মা বললেন, “এখন কেন আটকাচ্ছেন? দিনের পর দিন মদের ঠেক চললেও সবাই চুপ ছিলেন। একের পর এক দেহ তো পোড়ানোও হয়ে গেল।” হাওড়ায় বিষ মদের জেরে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিটি পরিবারই অভিযোগের আঙুল তুলেছে পুলিশের দিকে। তাদের দাবি, এর আগে মদ নিয়ে আপত্তির কথা পুলিশকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
থানা থেকে কয়েক পা এগোলেই বাঁ হাতের সরু গলি থেকেই গজানন বস্তির শুরু। সেখানে কয়েক ফুটের ঘুপচি ঘরগুলির একটিতে থাকতেন স্থানীয় কারখানার শ্রমিক, ৫২ বছরের রঞ্জিত গুপ্ত। মঙ্গলবার রাতে বিষমদ খেয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এ দিন তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্ত্রী ছায়া গুপ্ত। জানালেন, প্রতি রাতের মতো মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরেন রঞ্জিত। এর পর রাত ৩টে থেকে শুরু হয় রক্তবমি, পেটের সমস্যা। লিলুয়ার টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হলে কিছু পরেই মৃত্যু হয়। ছায়াদেবীর কথায়, “বারণ করলেও শুনতেন না। ছেলেটাও কোনও কাজ করে না। আমার সংসারটা ভেসে গেল।”
গজানন বস্তি থেকে কিছুটা এগোলেই ঘুপচি ঘরে চোলাইয়ের সঙ্গে মেশানো হত দেশীয় মদ। তার পরে ছোট বোতলে ভরে তা বিক্রি হত। স্থানীয় মহিলাদের অভিযোগ, রাতেই বোতলে মদ ভরার কাজ চলত। এক স্থানীয় মহিলার কথায়, “পুলিশ এসে দেখে চলে যেত। ওদের কী বোঝাপড়া ছিল তা জানি না।”
বিষ মদ-কাণ্ডে মৃত পার্থপ্রতিম দাসের (৫৫) স্ত্রী ঊষসী দাস জানান, মঙ্গলবার রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে অসহ্য পেটের যন্ত্রণা শুরু হয় পার্থপ্রতিমের। সবুজ বমি হতে থাকে। রাতে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান তিনি। ঊষসী বলেন, “পুলিশ ওই ঠেক ভেঙে দিলে হয়তো এ ভাবে মরতেহত না।” আর পার্থপ্রতিমের ছেলে রবীনও বলছেন, “মদের সঙ্গে গাঁজাও খেতেন বাবা। পাড়ার মধ্যে ঠেক থাকাই কাল হল।”
কিন্তু পুলিশের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানাননি কেন কেউ? অমৃতের দাদা সন্তোষ বর্মার দাবি, “থানার পিছনেই যে মদের ঠেক চলছে, তা তো সকলেই জানতেন। আলাদা করে অভিযোগের কী দরকার? এখন একসঙ্গে এত জন মারা যাওয়ায় হইচই হচ্ছে, না-হলে তো কিছুই হত না।” পেশায় দিনমজুর অমৃত ওই বস্তিতে থাকতেন দাদা-বৌদির সংসারে। তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা থাকেন বিহারে। ঘটনায় মৃত রাজেশ্বর রায়ের (৫০) ভাইপো রবীন্দ্র বলেন, “কাকা এখানে একাই থাকতেন। ওই রাতে বাড়ি ফিরে পেটের যন্ত্রণায় ছটফট শুরু করলে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
কিন্তু এ দিন যত বেলা গড়িয়েছে, তত এলাকায় মৃত এবং অসুস্থদের বাড়ির দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে। যা দেখে স্থানীয়দের সংশয়, “এ সব চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে না তো!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy