প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সরকারি সাহায্যের অভাবে বহু স্কুলে ছাত্রাবাস বন্ধ। ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ। কয়েক বছর আগেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাত্রাবাস ছিল। সেখানে থেকে দূরের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারত। কাছাকাছি দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরাও অনেকে থাকত। পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে ভিন্ রাজ্যে যাওয়া বহু পরিবারের ছেলেমেয়ে এই ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করত।
আগে সরকার হস্টেলের ভবন তৈরি, প্রাচীর তৈরি বা সংস্কারের টাকা অনুমোদন করত। ওই টাকা দিয়ে হস্টেলের আবাসন সংস্কারের পাশাপাশি সুপার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের বেতনেরও খানিকটা সুরাহা হত। স্কুলগুলির তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ছাত্রাবাসের জন্য কোনও অনুদান আসে না। বিদ্যুতের বিলও স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়।
স্কুল সূত্রের খবর, করোনার সময় থেকেই ছাত্রাবাসগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। কারণ, সে সময়ে ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সকলেই বাড়ি চলে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে তাদের অনেকে স্কুলছুট হয়ে পড়ে। অনুদান না আসায় কর্মীদের বেতন দেওয়ার সমস্যা ছিল। এ দিকে, ছাত্রাবাসে কোনও কর্মী না থাকায় নিরাপত্তার অভাবও ছিল।
উৎসশ্রী প্রকল্পের সুবাদে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলি হয়ে যান। এঁদের কেউ কেউ এক সময়ে ছাত্রাবাসগুলিতে থাকতেন। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের হেমন্তকুমারী হাই স্কুল, বাড়িভাঙা বামাচরণ বিদ্যাপীঠ, মথুরাপুর ১ ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর সীতানাথ হাই স্কুল, যাদবপুর হাই স্কুল সহ বেশ কয়েকটি স্কুল। বামাচরণ বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বুধরাই হেমব্রম বলেন, ‘‘আমাদের বিদ্যালয়ে আবাসিকে ৬০-৭০ জন ছাত্র ছিল এক সময়ে। করোনো-কালে ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে কোনও কর্মী না থাকায় ছাত্রদের থাকার অনীহা ছিল। হস্টেল চালানোর জন্য সরকার টাকা দেয় না।’’
তবে মথুরাপুর ১ ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের পাশে তিনতলা ভবনে দু’টি ছাত্রছাত্রী নিবাস রয়েছে। প্রায় এক হাজার ছাত্রছাত্রী থাকার ব্যবস্থা থাকলেও আছে সাড়ে সাতশো জন। প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘এখানে অভিভাবকদের এবং ছাত্রছাত্রীদের আন্তরিকতার কারণে পড়ুয়ারা রয়েছে। সেই সঙ্গে স্কুল পরিচালন সমিতির সহযোগিতা করছে। বড় বড় ভবনগুলি খালি পড়ে থাকলে পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।’’
ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন 'অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস'-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘এই হস্টেলগুলোর পরিকাঠামোর খরচ আগে শিক্ষা দফতর অনেকটাই বহন করত। এখন অধিকাংশ স্কুলগুলিকেই প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যয় বহন করতে হয়। ফলে অধিকাংশ স্কুলের সঙ্গে থাকা হস্টেল উঠে গিয়েছে। আমাদের দাবি, হস্টেলগুলির পরিকাঠামোর খরচ পুরোটাই শিক্ষা দফতর বহন করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy