Advertisement
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Poor condition of road

কেন্দ্র-রাজ্যের বিবাদে স্কুলের পথ প্রায় পুকুর, যেতে বিপাকে পড়ুয়ারা

স্কুল চত্বরে জমা জল নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের জেরেকী ভাবে চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে পড়ুয়াদের। প্রথম স্কুলটি বিএন রেলওয়ে কলোনির শ্রীনেহেরু শিক্ষা সদন।

বৃষ্টির পর জলকাদা মাখা পথ পেরিয়ে স্কুল এর পথে হাওড়া রেল কলোনিতে ছবি দীপঙ্কর মজুমদার।

বৃষ্টির পর জলকাদা মাখা পথ পেরিয়ে স্কুল এর পথে হাওড়া রেল কলোনিতে ছবি দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৪৪
Share: Save:

প্রথম দৃশ্য: রাস্তা চওড়া করতে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। ফলেগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পরে সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটা দায়। অথচ সেই জল-কাদা পেরিয়েই হেঁটে বা সাইকেলে স্কুলে পৌঁছতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। শুধু তা-ই নয়, পাশের রাস্তাটি উঁচু হয়ে যাওয়ায় স্কুলের সামনের মাঠে জল জমে তৈরি হয়েছে আস্ত পুকুর! অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষেও জমেছে হাঁটুজল। ফলে পঠনপাঠন শিকেয়।

দ্বিতীয় দৃশ্য: স্কুলে ঢোকাররাস্তা হয়ে গিয়েছে পানাপুকুর। প্রায় হাঁটুজল পেরিয়ে, কচুরিপানাভাসতে থাকা পথ দিয়েই খুদে পড়ুয়াদের সাইকেলে বা কোলে তুলে স্কুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। স্কুলের গেটে জলে দাঁড়িয়েই ডিউটি করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, প্রতি বর্ষায় এটাই নাকি ভবিতব্য। তবে চলতি বর্ষার মরসুমের শুরু থেকেই স্কুলে আসার পথের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পরে এটাই হল হাওড়ার দুইশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ছবি। যা প্রমাণ করেছে, স্কুল চত্বরে জমা জল নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের জেরেকী ভাবে চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে পড়ুয়াদের। প্রথম স্কুলটি বিএন রেলওয়ে কলোনির শ্রীনেহেরু শিক্ষা সদন। হাওড়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিয়াপাড়ার এইস্কুলটি রেলের জমিতে চলা রাজ্য সরকার অনুমোদিত স্কুল। দ্বিতীয় স্কুলের নাম কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়।লিলুয়া এলাকায় হাওড়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা এই স্কুলটিকেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত, সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ জমিতে তৈরি হওয়া।

টিকিয়াপাড়ার শ্রীনেহেরু শিক্ষা সদন সূত্রের খবর, পূর্ব রেলের বি এন রেলওয়ে কলোনির ওই স্কুলটি রয়েছে রেলের জমিতে। আর তা নিয়েই রেলের সঙ্গে রাজ্যের বিবাদ দীর্ঘ দিনের। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রাক্‌ প্রাথমিক থেকেঅষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চলা এই স্কুলে শতাধিক পড়ুয়া রয়েছে। তবু, গত ৬০ বছরে রেল ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ না দেওয়ায় স্কুলে বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে প্রবল গরমে বিনা পাখাতেই ক্লাস করে পড়ুয়ারা। সেই সঙ্গে এ বছরে রেলওয়ে কলোনির রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরুহওয়ায় রাস্তা উঁচু হয়ে গিয়ে স্কুলের জমি তুলনায় নিচু হয়ে গিয়েছে। ফলে স্কুল চত্বরে জল বেশিজমছে। শ্রেণিকক্ষের ভিতরেও ৬ ইঞ্চি জল জমে যাওয়ায় ক্লাস বন্ধ করতে হয়েছে। স্কুলের প্রধানশিক্ষক গৌতম শর্মা বলেন, ‘‘রেল রাস্তা চওড়া করছে কোনও নিকাশির ব্যবস্থা না করেই। ফলে জল ঢুকে যাচ্ছে ক্লাসেও। ভাঙাচোরা কাদামাখা রাস্তায় পড়ে গিয়ে অনেক পড়ুয়ার হাত-পা ভেঙেছে। রেলকে বার বার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।’’

অন্য দিকে, স্কুলে যাওয়ার ভাঙাচোরা রাস্তায় বৃষ্টিতে হাঁটুজল জমে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছেলিলুয়ার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য। নিত্যদিনই ছোটখাটোদুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তার পাশের নর্দমা জলে ডুবে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সকালেই এক খুদে পড়ুয়া নর্দমায় পড়ে যায়। তবুও রাস্তা মেরামত বা নিকাশি সংস্কার করতে নারাজ হাওড়া পুরসভা। এ বিষয়ে হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়টির জমি সেনাবাহিনীর। নিকাশির কাজের জন্য আমরা তাদের থেকে ‘নো অবজেকশন’ চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা দেয়নি। তাই পুরসভার কোনও অধিকার নেই অন্যের জমিতে নিকাশির কাজ করার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE