মাঘ সংক্রান্তিতে ত্রিবেণীর কুম্ভে উপচে পড়ল ভিড়। একাধিক পুরুষ ও মহিলা ভিড়ের চাপে অসুস্থও হয়ে পড়েন। অস্থায়ী স্বাস্থ্য শিবিরগুলিতে তাঁদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়। তবে, কোনও অঘটন ঘটেনি। উদ্যোক্তাদের দাবি, লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছিল।
বুধবার দিনভর ব্যান্ডেল-কাটোয়া লোকালে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। কাতারে কাতারে মানুষ ট্রেন থেকে ত্রিবেণী স্টেশনে নেমে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়েছেন গঙ্গার ঘাটে। কেউ সপ্তর্ষি ঘাটে, কেউ ত্রিবেণী শ্মশান লাগোয়া ঘাটে, কেউ আশ্রম ঘাটে। তিন ঘাটেই অজস্র মানুষ ভিড় করেছিলেন। পুণ্যের আশায় গঙ্গায় ডুব দেন তাঁরা। খানিক দূরে সাধু-সন্ন্যাসীদের আখড়াতেও গিয়েছেন বহু মানুষ। আশীর্বাদ নিয়েছেন। সন্ন্যাসীরা পথ পরিক্রমা সেরেছেন। চলার পথে নাগা সন্ন্যাসী দেখে প্রণাম ঠুকেছেন ভক্তের দল। ছোট ট্রাকে চেয়ার পেতে বসেও অকাতরে আশীর্বাদ বিলিয়েছেন সন্যাসী।
ঘাটে যাতায়াতের পথে ভিড়ে কার্যত ধাক্কাধাক্কির উপক্রম হয় নানা সময়ে। ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। গঙ্গায় দুর্ঘটনা এড়াতে নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত দড়ি দিয়ে রাখা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা রাস্তায় ছিলেন। বিপর্যয় মোকাবিলা দল উপস্থিত ছিল। গঙ্গায় পাক খেয়েছে স্পিড বোট। বাঁশবেড়িয়া পুরসভার তরফে মাইকে টানা ঘোষণা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। শৌচাগার, পানীয় জলের বন্দোবস্তের কথা জানানো হয়েছে। ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষজনকে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছে দিতেও ঘোষণা চলেছে। নানা প্রতিষ্ঠানের তরফে কোথাও খিচুড়ি, কোথাও ডাল-ভাত-তরকারি নিখরচায় খাওয়ানো হয়েছে পুণ্যার্থীদের।
‘পুণ্যস্নানে’ এসেছিলেন মানকুন্ডুর বছর সত্তরের অতুল পাল। ডুব দিয়ে উঠে বললেন, ‘‘কেদার, বদ্রি, কামরূপ, কামাক্ষ্যা, বৃন্দাবন, হরিদ্বার, হৃষীকেশ গিয়েছি। এখানে স্নান করেও খুব ভাল লাগছে।’’ সাধুদের আখড়ায় জনৈক গৌরহরি সাধু জানান, তারাপীঠ থেকে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানেই রয়েছি। এত ভিড় ওই দিকে (সপ্তর্ষি ঘাট) যাইনি।’’
এ দিন ভোর তিনটে থেকেই সপ্তর্ষি ঘাটে স্নানের জন্য ভিড় জমান মানুষ। সকাল ১১টায় সপ্তর্ষি ঘাটে সাধুদের ‘শাহি স্নান’ হলে ওই ঘাট সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ভিড়ের বহর দেখে অনেকেই মনে করছেন, পরিকল্পনামাফিক চললে এখানে পর্যটনের প্রসার ঘটতে পারে।
এ দিন কুম্ভ স্নানে আসা মানুষজনের অনেকেই সপ্তর্ষি ঘাটে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মন্দির, বেণীমাধব মন্দির ইত্যাদি জায়গা ঘুরে দেখেন। কেউ কেউ যান রামানুজ সীতারাম মঠে। এ দিন সেখানে বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল। দিনভর হরিনাম সংকীর্তন চলে। সন্ধ্যারতি হয় গঙ্গার ঘাটে। আশপাশে রঘু ডাকাতের কালীবাড়ি, দীক্ষাস্থলী মঠ, গৌড়ীয় মঠ, সপ্তগ্রামে উদ্ধারন দত্ত ঠাকুরবাড়িও দূরে নয়। কাছেই বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির।
এ সবের পাশাপাশি বাঁশবেড়িয়ার গাজি দরগা, ব্যান্ডেল চার্চ, চুঁচুড়া ইমামবাড়া, দেবানন্দপুরে নিত্যানন্দ মহাপ্রভূর অন্যতম পার্ষদ রঘুনাথ গোস্বামীর জন্মস্থান, কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান রয়েছে। ফলে পর্যটনের দিক থেকে এই জায়গা আকর্ষণীয় হয়ে উঠতেই পারে, মনে করছেন অনেকেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)