Advertisement
E-Paper

ছাতা মাথায় শিক্ষক, ছাতা মাথায় পড়ুয়া, ফুটো চালের ক্লাসঘর জল থইথই, তার মাঝেই চলছে পড়াশোনা!

পান্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ৬৮ জন। শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয় এখানে। স্কুলের ক্লাসঘর চারটি। তার মধ্যে দু’টি ক্লাসঘরে টিনের ছাউনি। এই বর্ষায় জলে ভেসে গিয়েছে দু’টি ক্লাসঘর। তার মধ্যেই ছাতা মাথায় দিয়ে শিক্ষাদান করেছেন শিক্ষকেরা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৫ ১৯:৩২
Pandua Primary School

ছাতা মাথায় শিক্ষক। ছাতা মাথায় পড়ুয়া। চলছে পড়াশোনা। —নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে ভাসছে ক্লাসঘর। ফুটো চাল দিয়ে টপটপ করে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা। তার মধ্যে কালো রঙের ছাতা মাথায় দিয়ে চেয়ারে বসে পড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক। বেঞ্চে বসা পড়ুয়াদের মাথাতেও নানা রঙের ছাতা। তাদের এক হাতে ছাতার হাতল, অন্য হাতে কলম। চোখ বইয়ে। ভরা আষাঢ়ে এমনই দৃশ্য দেখা গেল হুগলির একটি প্রাথমিক স্কুলে। ক্লাসঘরে ছাতা মাথায় শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের ছবি নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপির কটাক্ষ, এটাই তৃণমূল আমলে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার হাল। পাল্টা যুক্তি সাজিয়েছেন শাসকদলের নেতারা। এ সবের মধ্যেই শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা অপেক্ষায়, কবে সারানো হবে ক্লাসঘরের চাল।

হুগলির পান্ডুয়ার পাঁচপাড়া প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াসংখ্যা ৬৮। শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয় এখানে। স্কুলের ক্লাসঘর চারটি। তার মধ্যে দু’টি ক্লাসঘরে টিনের ছাউনি। এই বর্ষায় জলে ভেসে গিয়েছে দু’টি ক্লাসঘর। তার মধ্যেই ছাতা মাথায় দিয়ে শিক্ষাদান করছেন শিক্ষকেরা। ছাতায় মাথা বাঁচিয়ে লেখাপড়া করছে কচিকাঁচারা। ইতিমধ্যে স্কুলের ওই দুরবস্থার ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। নিজের এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) হুগলির স্কুলের ছবি দিয়ে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। ছবি দিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক জয়ন্ত গুপ্ত জানান, যে দিন থেকে তিনি ওই বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন, সে দিন থেকেই টিনের চালের দুরবস্থা। বছর বছর বর্ষায় চালের ফুটো বেড়েছে। বেড়েছে ক্লাসঘরে ছাতার সংখ্যা। তিনি বলেন, ‘‘আমি ২০২৩ সালে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি। তার আগে থেকেই টিনের ঘর দু’টির অবস্থা খারাপ। আমি প্রশাসনের যে যে জায়গায় জানানো দরকার, জানিয়েছি। কাজ হয়নি। এই ছবি দেখার পরে গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রশাসনের তরফে দু’টি ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।’’

প্রধানশিক্ষক আরও জানান, গত বছর ক্লাসঘর সংস্কারের জন্য ‘এস্টিমেট’ পাঠানো হয় প্রশাসনের কাছে। এখনও অপেক্ষা রয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের স্কুলে পড়াশোনা ভাল হয়।’’ একই কথা বলছেন গ্রামের বাসিন্দারাও। সেই সঙ্গে এই ভাবে ছাতা মাথায় দিয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে হয় বলে ক্ষুব্ধ তাঁরা। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, ‘‘রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার হাল কী, তা পান্ডুয়ার ওই স্কুল দেখে সহজে অনুমেয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শিক্ষা পরিকাঠামো খাতে যা কেন্দ্রীয় সরকার যা সাহায্য করে সবই লুটপাট করছে তৃণমূল।’’ পান্ডুয়ার প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএম নেতা এবং পেশায় স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলগুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। এই রাজ্য সরকারের নীতি হচ্ছে, বাচ্চাদের থেকে বাচ্চার মা-বাবাকে খুশি করো বেশি। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে।’’ পান্ডুয়ার তৃণমূল প্রাক্তন সভাপতি সঞ্জয় ঘোষের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বিজেপির মুখে এ সব কথা মানায় না। ওরা যে রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, আগে সে দিকে তাকাক। বাংলার কথা পরে বলবে। আর স্কুলের বিষয়টা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কাজ হবে।’’

পান্ডুয়ার ওই স্কুলের পরিস্থিতি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিডিও সেবন্তী বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে পাঁচপাড়া স্কুলের জন্য মোট ১১ লক্ষ টাকার ‘এস্টিমেট’ পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্কুলে দুটো ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে ব্লক প্রশাসন।

Hooghly Primary School Rainy Season TMC BJP CPM BDO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy