সরকারি-বেসরকারি স্তরে সচেতনতা-প্রচার কম নেই। কিন্তু কলকাতার কাছের জেলা হুগলিতে নাবালিকাদের ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ বা নাবালিকা বিয়ের ঘটনা বাড়ছে। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। সোমবার নাবালিকা নিখোঁজ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নিতে জেলায় হাজির হন কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার।
এ দিন চুঁচুড়ার সার্কিট হাউসে অর্চনা জেলা প্রশাসন ও গ্রামীণ পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল, হুগলি গ্রামীণ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার, আরামবাগের আইসি রাকেশ কুমার সিংহ এবং অন্য অধিকারিকেরা।
হুগলিতে গত বছর নিখোঁজ নাবালিকার সংখ্যা ছিল ৮০০-র বেশি। চলতি বছর শুধু জানুয়ারিতেই সংখ্যাটা শতাধিক জানিয়ে অর্চনা বলেন, ‘‘হুগলির পরিসংখ্যান সত্যিই উদ্বেগজনক। কেন এমন হল, পাশাপাশি কী ভাবে সংখ্যাটা আগামী বছরের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ তিনি জানান, নিখোঁজ নাবালিকারা উদ্ধার হলেও প্রায় ২৫ শতাংশের খোঁজ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাদের।
এই পরিস্থিতির পিছনে মোবাইলের অপব্যবহার যেমন রয়েছে, তেমনই পারিবারিক কারণও রয়েছে দাবি করে অর্চনা বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দোষ থাকলে দু’বছরের কারাদণ্ডের আইন রয়েছে। প্রয়োজনে সেই আইন প্রয়োগ করতে হবে।’’ বাড়ি বাড়ি আশাকর্মীদের দিয়ে এ বিষয়ে প্রচার এবং জেলা জুড়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ আরামবাগ মহকুমায় সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত এই মহকুমার চারটি থানায় মোট ১২টি নাবালিকা অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ২০২৪ সালে সেই অভিযোগের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫টি। সব ক’টি ক্ষেত্রেই নাবালিকাদের পুলিশ উদ্ধার করলেও অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি। এই মহকুমায় নাবালিকা বিয়েও পুরোপুরি রোখা যায়নি। মহকুমার ছ’টি ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি মাসে গড়ে ৩-৪টি করে নাবালিকার বিয়ের অভিযোগ আসে। তা রোখার চেষ্টা হলেও কিছু ক্ষেত্রে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সেই নাবালিকাদেরও উদ্ধার করে বাপের বাড়িতে রেখে নিয়মিত নজরদারি করা হয়। নাবালিকা বিয়ে ঠেকাতে বিভিন্ন স্কুলের ‘কন্যাশ্রী’ ক্লাবগুলিও কাজ করছে। তাতে বেশ কিছু সাফল্য মিলছে বলে স্কুলগুলির দাবি।
আরামবাগে পকসো মামলাও কম নেই। সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগে পর্যন্ত মামলা বকেয়া ছিল ৯২টি। ২০২৪ সালে মামলা দায়ের হয় মোট ৪০টি। ২০২৫ সালে মার্চের এই সময় পর্যন্ত ১২টি পকসো মামলা দায়ের হয়েছে। এগুলির মধ্যে মোট ১৭টির নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি রয়েছে ১২৭টি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)