E-Paper

পুকুরে জাল, পাখির মরণ ঠেকাবে কে?

হুগলি জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ নির্মাল্য চক্রবর্তীও ফাঁদি-জালের বাড়বাড়ন্তের কথা মানছেন।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৪:৫০
পুকুরে পাতা জালে আটকে প্রাণ হারাচ্ছে পক্ষীকুল। দেবানন্দপুরের একটি পুকুরে।

পুকুরে পাতা জালে আটকে প্রাণ হারাচ্ছে পক্ষীকুল। দেবানন্দপুরের একটি পুকুরে। নিজস্ব চিত্র।

শীতের মরসুম পড়তেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে খাল, বিল, পুকুরে। তবে, মাছ বাঁচাতে পুকুরের উপরে পাতা ফাঁদি-জাল পাখিদের বিপদ ডেকে আনছে। গত দিন তিনেকের মধ্যে হুগলির দেবানন্দপুরের একটি ছোট পুকুরে ওই জালে আটকে পঁচিশটিরও বেশি বকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সিঙ্গুর, চণ্ডীতলা বা পান্ডুয়াতেও। বাদ নেই শহরাঞ্চলও। উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচড়া— সর্বত্রই মরণফাঁদে পাখি মারা পড়ছে। কিন্তু বন দফতর বা প্রশাসনের ভ্রূক্ষেপ নেই বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ।

হাওড়ার বিভাগীয় বনাধিকারিক সুজিত দাস অবশ্য বলেন, ‘‘একেবারেই পদক্ষেপ নেই বলা ভুল। জালে পাখি আটকানোর খবর পেলে আমরা যাই। সাধারণ মানুষকে সচেতনও করি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রয়োজনে আমরা মৎস্য দফতরে চিঠি দেব, যাতে ফাঁদি-জালের হাত থেকে পাখি বাঁচাতে এক সঙ্গে পদক্ষেপ করা যায়।’’

হুগলি জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ নির্মাল্য চক্রবর্তীও ফাঁদি-জালের বাড়বাড়ন্তের কথা মানছেন। তাঁর দাবি, বৈঠকে মৎস্যজীবীদের এ নিয়ে সচেতন করেও লাভ হচ্ছে না। তিনি জানান, পাখির হাত থেকে মাছ বাঁচাতে অনেক পুকুর মালিক বা মাছচাষি নানা ফন্দি আঁটেন। ফাঁদি-জালও তেমনই। বর্ষার পরপরই প্রজননের জন্য চার মাস সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকা। ফলে, এই সময় ওই সব মৎস্যজীবীদের অনেকেই পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। তাঁরাও মাছ বাঁচাতে একই পন্থা নেন। ফলে, বর্ষার পর থেকে শীতকাল পর্যন্ত ফাঁদি-জালের ব্যবহার বাড়ে।

দেবানন্দপুরের পুকুরটিতে পাখিদের বিপন্নতার কথা চুঁচুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার তথা স্কুল শিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচাৰ্যকে জানান তাঁর কিছু ছাত্র। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের পাঠানো ছবি দেখে আঁতকে উঠি। জালে অনেকগুলি পাখি আটকে ছিল।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য সন্দীপ সিংহ মনে জানান, পাখিহত্যা বন্ধের লক্ষ্যে সাংগঠনিক ভাবে তাঁরা রাস্তায় নামবেন। ব্যান্ডেলের পশুপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিংহের ক্ষোভ, জলাশয় শুধু নয়, আম, লিচু প্রভৃতি ফল বাঁচাতে গাছেও ফাঁদি-জাল পাতা হয়। তাতে শালিক, ঘুঘু, কাক থেকে বিরল প্রজাতির পাখিও মারা পড়ে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বার বার বন দফতরে জানিয়েও কিছু হয়নি কাজ হয়নি। ওই জাল তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।’’

চন্দন জানান, মাছ ধরার জাল বা মশারির জালে ফাঁস পড়ার ভয় নেই। কিন্তু নাইলনের সুতো দিয়ে তৈরি ফাঁদি-জালে কিছু ঢুকিয়ে টানলেই ফাঁস পড়ে যায়। তীব্র গতিতে পুকুরের দিকে নামার সময় ওই ধূসর জাল পাখিদের চোখে খুব একটা পড়ে না। শেষ মুহূর্তে যখন বুঝতে পারে, তখন গতি কমানো বা দিক পরিবর্তন করে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকে না। জালে পা অথবা ডানা আটকাতেই ছটফট শুরু করে। ক্রমশ জালে বন্দি হয়ে যায়।

দেবানন্দপুরের ওই পুকুরটির মালিকানা বা ইজারা কার, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে বলে জানিয়েছে পঞ্চায়েত। শুক্রবার পর্যন্ত ওই জাল খোলা হয়নি। অন্য এলাকার মাছচাষিদের একাংশের দাবি, লোকসান ঠেকাতেই তাঁরা ফাঁদি-জাল পাততে বাধ্য হন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Migratory Bird Chinsurah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy