‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহে পাইপ লাইন বসাচ্ছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। আগামী জুন মাসে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে হুগলিতে সেই কাজ জোরকদমে চলছে। এ দিকে, ওই কাজের জেরে রাস্তা ভাঙা, নদ-নদীর বাঁধে ধস নামার অভিযোগ তুলছেন এলাকাবাসী। এ জন্য তাঁরা দুষছেন সরকারি দফতরগুলির ‘সমন্বয়ের অভাবকে’।
ইতিমধ্যে গত বন্যায় স্রেফ পাইপ লাইনের জন্যে আরামবাগ মহকুমার মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং দ্বারকেশ্বর নদের বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ ভাঙা ও ধস নামা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেসেচ দফতর। তাদের না জানিয়ে কৃষি সেচ দফতরের ‘নদী সেচ’ (আরএলআই) এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল সরবরাহের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া নিয়ে গত নভেম্বর মাসে আপত্তিও তোলে সেচ দফতর।
সেচ দফতরের বক্তব্য, ওই সব পাইপ থেকে জল লিক হয়েই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদ-নদীর জল বাড়লেই বাঁধ ফাঁক হয়ে ভেঙে এলাকা বন্যাপ্লাবিত হচ্ছে। যেমন, মুণ্ডেশ্বরী নদীর খানাকুলের কেদারপুরে ১৬০ মিটার এবং পুরশুড়ার বড়দিগরুইঘাটে ১৩০ মিটার বাঁধ ভাঙার অন্যতম কারণ, ওই নদী সেচের পাইপের ফাঁক। একই রকম ভাবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন বসানোয় দ্বারকেশ্বর নদের আরামবাগের সালেপুর, খানাকুল ২ ব্লকের কাগনান, খানাকুল ১ ব্লকের কিশোরপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকার ময়াল সহ তিনটি এলাকায় বাঁধে ধস নেমেছে।
বাঁধের ক্ষতির কথা স্বীকার করে জেলা সেচ দফতরের (নিম্ন দামোদর) এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের সরকারি দফতরগুলির মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এরপরে বাঁধে কোনও কাজ করলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলা আছে। নদ-নদীর ভাঙন ও ধসগুলো আমরাই সংস্কার করব।”
বন্যাপ্লাবিত খানাকুল ২ ব্লকের ধান্যগোড়ির সুকুমার সামন্ত, খানাকুল ১ ব্লকের ময়ালের সমর মণ্ডলের দাবি, ‘‘সরকারি দফতরগুলি নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করুক। এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ যেমন জরুরি, তেমনই পরিস্রুত পানীয় জল এবং গ্রীষ্মে চাষের জন্য সেচের জল, যোগাযোগের জন্য রাস্তাও দরকার।’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধের ক্ষেত্রে সেচ দফতর এবং নদী সেচ দফতর যুগ্ম পরিদর্শন করে কয়েকটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক বাঁধের এক-দেড় মিটার নীচের পাইপ লাইনগুলি তুলে বাঁধের উপরতল থেকে এক ফুটের মধ্যে আনা হয়েছে। দুই নদ-নদীর আরও জায়গাগুলি সংশোধন বাকি। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ সরানোরওব্যবস্থা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করা হচ্ছে। তাদের অনুমতি ছাড়া কোনও কাজ হয়ে থাকলে তা সংশোধন করে নেওয়া হচ্ছে।” একই রকম কৃষি সেচ দফতর এবং পূর্ত দফতরের কর্তারাও জানিয়েছেন, সরকারি দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয় রেখেই কাজের পরিকল্পনা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)