শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন কুণ্ডু মার্কেটের পোশাকের দোকানে খদ্দের নেই। নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকে সবে একটু একটু করে জমতে শুরু করেছিল পুজোর বাজার। কিন্তু, দুপুর হতে না হতেই মুখ ব্যাজার হল আকাশের। বৃষ্টি নামল। তার জেরে মার খেল আরও এক রবিবারের কেনাকাটা। আঁধার ঘনাল ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে। এ দিন হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছবিটা ছিল কমবেশি একই রকম।
ব্যবসায়ীদের খেদ, এমনিতেই করোনা আবহে মানুষের হাতে টাকা না থাকার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তাতেও যেটুকু বিক্রির আশা ছিল, দুর্যোগ বাদ সেধেছে।
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ শ্রীরামপুরে কেনাকাটা করতে আসেন। পুজোর আগের কয়েকটি রবিবারে শ্রীরামপুর মার্কেটে ক্রেতার ভিড়ে পা ফেলার উপায় থাকে না। পরিচিত সেই ছবি এ বার উধাও। বিকেলে ওই মার্কেটে দেখা গেল, অনেক দোকান ফাঁকা। কর্মচারী বা মালিক খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে। শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন গোপীনাথ স্মৃতি সুপার মার্কেটে রেডিমেড পোশাক বিক্রেতা শ্রীপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাধারণত এই সময় দৈনিক এক লক্ষ টাকার বেশি বেচাকেনা হতো। এ বার সেটা ২৫-৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। দোকানে ১১ জন কর্মচারী ছিলেন। ৮ জনকে বসিয়ে দিতে হয়েছে।’’
ব্যবসায়ীদের অনেকের বক্তব্য, লোকাল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় লোকজন আসতে পারছেন না। তার উপরে টানা বৃষ্টি পরিস্থিতি আরও বিগড়ে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জল জমে থাকায় লোকজন বেরোতে পারছেন না। অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। শ্রীরামপুরের কুণ্ডু মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা বিমল গোপের বক্তব্য, ‘‘সবাই করোনার টিকা পাননি। করোনার তৃতীয় ঢেউ, দুর্যোগের আশঙ্কাতেও মানুষ বেরোচ্ছেন না। সব মিলিয়ে পুজোর বাজার আগের মতো নেই।’’ বিক্রি কমেছে বলে আক্ষেপ শেওড়াফুলির শাড়ি ব্যবসায়ী কমল দেবনাথেরও।
জেলাসদর চুঁচুড়ায় শপিং মলে কিছু মানুষ ভিড় করলেও বাজার এলাকার ছোট দোকানগুলিতে বিক্রি সেই তুলনায় হয়নি বললেই চলে। পান্ডুয়া, বলাগড়, মগরার বাজারেও ভিড় জমেনি। ছোট-বড় সব দোকানেই একই পরিস্থিতি। একই চিত্র বৈদ্যবাটী, শেওড়াফুলি, চাঁপদানিতেও।
পান্ডুয়ার পোশাক ব্যবসায়ী বাবু সাহা বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর বেচাকেনার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি। করোনা আবহে গত বছর মন্দা গিয়েছে। এ বার পরিস্থিতি একটু ভাল হলেও বৃষ্টির জন্য ফের থিতিয়ে গিয়েছে।’’
দিনসাতেক হল পুজোর বাজার জমেছে আরামবাগে। কিন্তু, রবিবারে তুলনামূলক বেশি বিক্রির প্রত্যাশায় জল ঢেলেছে নিম্নচাপের আশঙ্কা। সকাল থেকে জামাকাপড় এবং জুতোর দোকান জমজমাট থাকলেও বিকেলে লোক ছিল না। শহরের প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র ব্যবসায়ী হিমনাথ কুণ্ডু বলেন, ‘‘খারাপ আবহাওয়ার জন্য দুপুরের পরে প্রত্যাশামতো বিক্রি হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক দেড়-দু’লক্ষ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। আজ অনেকটাই কম হয়েছে।’’ বাজার মার খাওয়ার জন্য আবহাওয়াকেই দুষছেন শক্তিসাধন গুপ্ত, নবকুমার মণ্ডল প্রমুখ বস্ত্র ব্যবসায়ীরাও।
আরামবাগের একটি জুতোর দোকানের মালিক তাইবুল ইসলাম বলেন, ‘‘যতটা বিক্রি হওয়ার কথা, হচ্ছে না। একে করোনার জেরে কারখানায় কারিগর না থাকায় খদ্দেরের পছন্দসই জুতোর অভাব। তার উপরে দাম বেড়েছে। বিক্রি কমেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy