E-Paper

ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার জোগাচ্ছে বন্দিদের মনের রসদ

গ্রন্থাগারিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়, সংশোধনাগারের কন্ট্রোলার নবেন্দু সাহা, কবি সুচন্দ্রিতা ঘোষাল চক্রবর্তী। এক বন্দি গত সাত মাসে ১০৭টি বই পড়ে ফেলেছেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:১৫
পুস্তকাগারের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পরিষেবা চালু হয়েছিল।

পুস্তকাগারের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পরিষেবা চালু হয়েছিল। —প্রতীকী চিত্র।

গ্রন্থাগারের পথ চেয়ে থাকেন ওঁরা। পড়া বইটি ফিরিয়ে পছন্দসই অন্য বই বেছে নেন। সংশোধনাগারের চৌহদ্দিতে ওঁদের ভাল থাকার রসদ জোগায় দুই মলাটের লেখা। ভ্রমণ কাহিনি থেকে প্রেমের উপন্যাস, হতাশা কাটাতে মনীষীদের জীবনী, স্বনির্ভরতার দিশা থেকে কুটিরশিল্পের খুঁটিনাটি লেখা বই গোগ্রাসে পড়েন। চন্দননগর সংশোধনাগারে গ্রন্থাগার নেই। তবে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে গ্রন্থাগারই পৌঁছে যাচ্ছে সেখানে। সৌজন্যে— চন্দননগর পুস্তকাগার।

পুস্তকাগারের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই পরিষেবা চালু হয়েছিল। ২০২১ সালে অতিমারি-পর্বে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার নিয়ে কার্যত গৃহবন্দি মানুষের দুয়ারে বই পৌঁছে দিয়েছিল এই পুস্তকাগার। গ্রন্থাগারিক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এর পরে প্রশাসনের তরফে প্রস্তাব পেতেই তাঁরা সংশোধনাগারে গ্রন্থ পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হন। প্রত্যেক বুধবার বইয়ের সম্ভার নিয়ে গ্রন্থাগারিক সেখানে পৌঁছন। সঙ্গে থাকেন গ্রন্থাগারের কর্মীরা। সপ্তাহে ৭০-৮০টি বই লেনদেন হয়। রবিবার রাজ্যের ‘সাধারণ গ্রন্থাগার দিবস’ উপলক্ষে ওই ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার যায় সেখানে। লেনদেন হয় ৫১টি বই।

গ্রন্থাগারিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়, সংশোধনাগারের কন্ট্রোলার নবেন্দু সাহা, কবি সুচন্দ্রিতা ঘোষাল চক্রবর্তী। এক বন্দি গত সাত মাসে ১০৭টি বই পড়ে ফেলেছেন। এ জন্য তাঁকে বই উপহার দেওয়া হয়। ওই বন্দি জানালেন, সংশোধনাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে তাঁর অবসাদ কাটাতে সাহায্য করেছে বই। কখন গ্রন্থাগার আসবে, তার জন্য ছটফট করেন তিনি। সাত মাসে ৯৪টি বই পড়ে একই উপহার পেলেন আর এক বন্দিও।

কয়েক জন আবাসিককে নিজের কবিতার বই ও গল্পগ্রন্থ উপহার দেন সুবীর। নিজের কবিতার বই কয়েক জন আবাসিককে দেন সুচন্দ্রিতাও। সুবীর জানান, আদতে ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা এক বন্দি বাংলা সাহিত্য নিয়ে কথা বললেন ইংরেজিতে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণে তাঁরা কিছুটা অবাকই হয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সংশোধনাগারে মোবাইল ফোন মেলে না। আবাসিকদের মনের রসদ জোগায় বই।’’

পুস্তকাগার কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে কাগজ-কলম দেওয়া হয় আগ্রহী বন্দিদের দেওয়ার জন্য। যাতে তাঁরা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন। সেই সব পুস্তকাগারের বাৎসরিক পত্রিকায় ছাপা হবে। সুবীর বলেন, ‘‘বই সংশোধনের সহায়ক হলে তার থেকে ভাল কী হয়! বই প্রকৃত বন্ধু।’’

সোমনাথ জানান, সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে একাধিক জন গ্রন্থাগারের সদস্য হয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Books library

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy