Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Bhadreswar

সাত দিনই স্কুল, লাফিয়ে বাড়ছে পড়ুয়ার সংখ্যা

১৯৫০ সালে স্থাপিত এই স্কুলে বর্তমানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলে। ৩২৫ পড়ুয়ার জন্য রয়েছে ১২ শিক্ষক-শিক্ষিকা। বছর দশেক আগে এই স্কুলে পড়ুয়া ছিল ১৭৮ জন।

নজির: ভদ্রেশ্বরের শিশু শিক্ষা সদন জিএসএফপি স্কুল। নিজস্ব চিত্র

নজির: ভদ্রেশ্বরের শিশু শিক্ষা সদন জিএসএফপি স্কুল। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ঘোষ
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৪৭
Share: Save:

এই স্কুলে ক্লাস হয় সাত দিনই। রবিবার চলে সব বিষয়ের চর্চা, হাতের কাজের প্রশিক্ষণ আর জিমন্যাস্টিক। পড়ুয়াদের নিয়ে বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস করান প্রধান শিক্ষক।

প্রায় ১১ বছর ধরে এ ভাবেই চলছে ভদ্রেশ্বরের শিশু শিক্ষা সদন জিএসএফপি স্কুলে। যেখানে বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা কমছে, সেখানে এই স্কুলে পড়ুয়া বেড়েছে প্রায় দু’গুণ। স্কুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পড়ুয়া আর অভিভাবকরা।

১৯৫০ সালে স্থাপিত এই স্কুলে বর্তমানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলে। ৩২৫ পড়ুয়ার জন্য রয়েছে ১২ শিক্ষক-শিক্ষিকা। বছর দশেক আগে এই স্কুলে পড়ুয়া ছিল ১৭৮ জন। ২০১১ সালের ৩১ অগস্ট স্কুলে যোগ দেন প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হাওলাদার। তাঁর হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে স্কুলটি। এখন পড়ুয়া সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২৫-এ। শুধু তাই নয়, ভদ্রেশ্বর ও পাশের নানা এলাকা থেকে বহু অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম থেকে ছাড়িয়ে ভর্তি করাচ্ছেন এই স্কুলে।

কোন মন্ত্রে এই বদল?

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বিশ্বজিৎবাবু স্কুলের হাল ধরার পরই সকলের আগে জোর দেওয়া হয়েছিল পুষ্টিকর মিড ডে মিল ও স্বাস্থ্যবিধি মানার দিকে। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নিজস্ব বাগান তৈরি করে আনাজ, ফল চাষ শুরু হয়। সেগুলিই মিলে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। প্রতিটি পড়ুয়াকে খেলাধুলোয় উৎসাহ দেওয়া হয়। খেলার টানেও স্কুলমুখী হতে শুরু করে পড়ুয়ারা। এরপর নজর বাড়ানো হয় পড়ার দিকে, বিশেষত ইংরেজিতে। প্রতিদিন ছুটির পর যে পড়ুয়ারা যে বিষয়ে দুর্বল, তাদের দল তৈরি করে শুরু হয় বিশেষ ক্লাস নেওয়া। আর রবিবারগুলো বরাদ্দ সব বিষয়ের চর্চা ও হাতের নানা কাজ শেখায়। করোনা পরিস্থিতিতেও অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি নিয়মিত পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট দলে ভাগ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে এসেছেন শিক্ষকরা। কম্পিউটার ও প্রজেক্টর ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। কোনও পড়ুয়া না এলে শিক্ষকরা তার বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন। স্কুলে ফেরানোয় উদ্যোগী হন।

এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘নিজের হাতে যে গাছ লাগাই, তার ফল খেতে দারুণ লাগে। স্কুলে কত রকমের খেলার জিনিস আছে। স্কুলে আসতে ভাল লাগে।’’ অভিভাবক শর্মিষ্ঠা স্বর্ণকার বলেন, ‘‘শিক্ষকরা এত যত্ন নিয়ে পড়ান! আমার মেয়ে অঙ্কে দুর্বল। ওদের ক্লাসের তেমনই কয়েক জনকে নিয়ে বিশেষ ভাবে পড়ানো হয়। এর ফলও মিলছে। স্কুলের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’’ অন্য আর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। এই স্কুলের সুখ্যাতি শুনে ভর্তি করিয়েছি। এখানে খরচও কম। ছেলে শিখছেও ভাল।’’

২০১৫ সালে এই স্কুল আদায় করেছে ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কার। আর স্কুলের অগ্রগতিতে অবদানের জন্য ২০২১ সালে প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হাওলাদারকে রাজ্য সরকারের তরফে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ক্রীড়া প্রশিক্ষক এবং জিমন্যাস্টিকের জাতীয় খেলোয়াড়ও। তিনি জানান, রবিবার তাঁর উদ্যোগেই জনা ৫০ পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস হয়। সেখানে যেমন কোনও বিষয়ে দুর্বল পড়ুয়া থাকে, তেমনই আবার অনেক পড়ুয়া হাজির থাকা শখেও। চলে যোগাসন, জিমন্যাস্টিকের চর্চাও।

বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা এই স্কুলে আসতে ভালবাসে। এমনকি ছুটির দিনেও। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কীই বা হতে পারে! স্কুলছুটের পরিমাণ কমেছে। সব শিক্ষক, পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সহজ ছিল না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আগামী দিনে প্রতিটা শ্রেণিকক্ষকে ডিজিট্যাল মাধ্যমে আরও সাজাতে চাই। এখনও অনেক পথ চলা বাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhadreswar school student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE