Advertisement
E-Paper

শান্তনুকে বহিষ্কারে খুশি দলের অনেকেই

জেলার তৃণমূল নেতাদের অনেকেই খোলাখুলি জানিয়েছেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:৫২
জেলা পরিষদের দফতরে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধ ঘর।

জেলা পরিষদের দফতরে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধ ঘর।

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ইডি-র হাতে ধৃত হুগলির বলাগড়ের যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে মঙ্গলবার বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। এ নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে হুগলিতে তৃণমূলের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেরই মতে, দলের যথেষ্ট নাম খারাপ করেছেন শান্তনুর মতো লোকজন। অনেকে এঁদের দাপটে কোণঠাসা হয়েছে। অনেক আগেই দলের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে মত তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের।

জেলার তৃণমূল নেতাদের অনেকেই খোলাখুলি জানিয়েছেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি। তাঁদের বক্তব্য, কুন্তল স্থানীয় রাজনীতিতে সে ভাবে যুক্ত না থাকলেও শান্তনু রীতিমতো ছড়ি ঘুরিয়েছেন এক সময়ে। তাঁর এ হেন বাড়বাড়ন্তে নেতৃত্বের উপরে ক্ষোভ আছে দলের অনেকের।

তৃণমূল সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে দিলীপ যাদবকে সরিয়ে শান্তনুকে দলের জেলা যুব সভাপতি করা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সে আপত্তি ধোপে টেঁকেনি। শুধু দলের যুব সংগঠনে জেলার সর্বোচ্চ পদপ্রাপ্তিই নয়, শান্তনু জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও হন।

এখন শান্তনুকে নিয়ে দলের এই বিড়ম্বনায় কল্যাণের গলায় হতাশার সুর। বললেন, ‘‘আমরা বৃদ্ধ তৃণমূল। সংগঠনের কোনও দায়িত্বে নেই। নিজের লোকসভা কেন্দ্রের বাইরে বেরোই না। সংগঠনের কাজ করে পিকে-র টিম। ওরা কোনও কাজ দিলে যাই।’’ কল্যাণ-ঘনিষ্ঠ এক নেতার ক্ষোভ, গত বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলি এবং বাঁকুড়ার দায়িত্ব কল্যাণকে দিয়েছিলেন। তার পরে দলীয় সংগঠনে তিনি ‘উপেক্ষিত’ বলে অনেকেরই মত।

জেলা পরিষদের সদস্য-কর্মাধ্যক্ষদের একাংশের মতে, শান্তনু-কুন্তলের মতো নেতাদের বেড়ে ওঠার নেপথ্যে জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশের নিজস্ব স্বার্থ ছিল। তৃণমূলের অন্দরের খবর, মাস দুই আগে কুন্তল গ্রেফতারের পরেই দুর্নীতির খাতায় নাম থাকা নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলীয় নেতৃত্বের উপরে জেলায় দলের একাংশের তরফে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। সিঙ্গুরের এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা বার বার দলকে সর্তক করেছি। কেউ কান দেননি। উল্টে খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়া, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া, বলাগড়, চুঁচুড়ার দুনীর্তিগ্রস্তদের আড়াল করা হয়েছে। ফল হাতেনাতে মিলল।’’ শান্তনু-কুন্তলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরি হয়েছে বলে তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন। দলের শ্রীরামপুর-হুগলি সংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য নেতৃত্বের নানা স্তরে দীর্ঘ দিন ধরেই তথ্য দিয়ে আসছিলাম। নেতৃত্বের কোনও স্তরে হয় তো সেই খবর ছিল না। তাই এই দেরি।’’

বলাগড়ের ব্লক তৃণমূল নেতা নবীন গঙ্গোপাধ্যায়, তপন দাসেরা বলছেন, শান্তনুর জন্য দলের বদনাম হয়েছে। শান্তনুর বিরুদ্ধে দেরিতে হলেও ব্যবস্থা নেওয়ায় দলের ভালই হবে। নবীনের কথায়, ‘‘শান্তনুর দাপটে দলের অনেকে বসে গিয়েছিলেন। এখন তাঁরা কাজ করবেন।’’

বিরোধীদের অবশ্য কটাক্ষ, কুন্তল-শান্তনুকে বহিষ্কার শাসক দলের নাটক। সিপিএমের জেলা সভাপতি দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ থেকে (শান্তনুকে) বহিষ্কার করুক।’’

জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি প্রতুলচন্দ্র সাহার বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি আগেভাগে জেনে থাকেন, তবে তিনি নাটের গুরুমা। আর যদি কিছু না জেনে থাকেন, তবে তিনি ব্যর্থ। পদত্যাগ করা উচিত।’’ কুন্তল গ্রেফতার হয়েছেন দু’মাস আগে। তাঁকে বহিষ্কারে এত দিন কেন লাগল, সেই প্রশ্নও উঠছে। বিজেপি নেতা স্বপন পালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। প্যাঁচে পড়ে লোকদেখানো নাটক হচ্ছে। গ্রেফতারের আগে বহিষ্কার করলে বুঝতাম।’’

শান্তনুকে দল থেকে বহিষ্কার নিয়ে হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল যেটা ভাল বুঝেছে, করেছে।’’ জেলা পরিষদ থেকে শান্তনুকে বহিষ্কারের দাবি নিয়ে মেহবুব বলেন, ‘‘উনি (শান্তনু) দলীয় ভাবে নির্বাচিত হলেও প্রশাসনিক পদে রয়েছেন। সেই পদ থেকে সরানো একটা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। দল থেকে আমি এ ব্যাপেরে কোনও নির্দেশ পাইনি। পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Chinsurah Santanu Banerjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy