উদ্যোগ: হাওড়ার সালকিয়ার বিবির বাগানে এ ভাবেই চলছে খাটাল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
সামান্য বৃষ্টিতেই ভাসে অলিগলি। নর্দমায় ফেলা পাড়ার খাটালের বর্জ্য জলের তোড়ে ঢুকে যায় একতলার ঘর-গেরস্থালিতে। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও কমেনি দুর্গন্ধে ভরা অতিষ্ঠ সেই জীবন-যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা এ বার অন্য ভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরছেন এলাকার বাসিন্দারাই। জলে ডুবে থাকে পাড়ার যে দেওয়াল, সেটাই রং-তুলিতে সেজে উঠছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠে। অন্য সাহিত্যিকদের কথা ও আঁকায় ভরে উঠছে ওই দেওয়াল। স্থানীয় স্কুলের অভিভাবক ও এলাকার প্রবীণদের কথা ভেবে তৈরি হয়েছে পান্থশালা। এ সবেরই মধ্যে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় নিকাশি অবরোধের দায় নিয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছে আস্ত খাটাল!
ঘটনাস্থল হাওড়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিবির বাগান। সালকিয়ার ঘিঞ্জি এলাকা বলে পরিচিত ওই এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে নিকাশি সংস্কার না হওয়ায় এমনিতেই সামান্য বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ার সঙ্কট রয়েছে। তবে সেই জল দু’-এক দিনের মধ্যে নেমেও যেত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত চার বছর ধরে এলাকার একটি খাটালের বর্জ্য সরাসরি মূল নিকাশি নালায় দিনের পর দিন ফেলা হচ্ছে। ফলে এখন সামান্য বৃষ্টিতে জমা জল এক সপ্তাহেও নামে না। ভারী বৃষ্টি হলে সেই জল নর্দমা ছাপিয়ে ঢুকে যায় বসতবাড়ির একতলায়। ঘর তখন বাসযোগ্য থাকে না। দুর্গন্ধ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়।
সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন সালকিয়া হিন্দু স্কুলের পিছনে ১৪ নম্বর গলির বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, গত চার বছর ধরে এলাকার এই দুরবস্থার কথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক, পুরসভা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত ভাবে একাধিক বার জানিয়েও লাভ হয়নি। ফলে এলাকার নিকাশি আটকানোর হোতা ওই খাটালকেও সরানো যায়নি। অথচ হাওড়া শহর থেকে খাটাল উচ্ছেদ করার ঘোষণা হয়েছিল বাম আমলেই। তা হলে এত বছর পরেও বিবির বাগানের ওই খাটাল থাকে কী ভাবে? এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা শ্যামল দে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক মদত যেমন আছে, তেমনই আছে প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আমরা যে একটা পুর এলাকার বাসিন্দা, সেটা ভাবতেই লজ্জা করে।’’
কোনও ভাবেই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তাই বাসিন্দারা প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণে অভিনব প্রয়াস নিয়েছেন। জলে ডুবে থাকা সেই গলির পাঁচিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠ-সহ সাহিত্যিকদের কথা-আঁকায় ভরিয়ে তোলা হচ্ছে। রাস্তার পাশে গাছ লাগিয়ে বসার জায়গা বানিয়ে তৈরি হয়েছে সবুজে ঘেরা পান্থশালা। এই কাজে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে সালকিয়া হিন্দু হাইস্কুল, নবযুগ সাধারণ গ্রন্থাগার এবং সারস্বত সমাজ।
কেন তোলা গেল না ওই খাটাল? ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর মনজিৎ র্যাফেল বলেন, ‘‘আগে ওই খাটালটি তোলার চেষ্টা হয়েছিল। ফের চেষ্টা করা হবে। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী এবং জনপ্রতিনিধিরা একসঙ্গে বসে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ খাটালের জন্য যে এলাকার নিকাশি অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ওই খাটাল নিয়ে আগেও এলাকাবাসীর সঙ্গে বসেছি। এই ব্যাপারে শুধু পুরসভা এগোলে হবে না, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশকেও কাজটা করতে হবে। কারণ, ওই খাটালের শিকড় ভিন্ রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখান থেকেই মূলত বাধা আসছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy