E-Paper

শুকোচ্ছে জলাশয়, ময়ূর রক্ষায় উদ্বেগ রাজহাটে

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৮:১৮
মযূরের অবাধ বিচরণ পোলবার রাজহাটের গাঁধী গ্রামে।

মযূরের অবাধ বিচরণ পোলবার রাজহাটের গাঁধী গ্রামে। ছবি: তাপস ঘোষ।

প্রবল গরমে একের পর এক জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে পোলবার রাজহাটে। ফলে, এ বারও ময়ূর রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে এ তল্লাটের বাসিন্দা এবং পশুপাখিপ্রেমীদের। ময়ূরদের বাঁচাতে গ্রামবাসীদের একাংশ নিজেদের বাড়ির সামনে ঘটি-বাটিতে জল রাখছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে সমস্যা কতটা মিটবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

রাজহাটের বনাঞ্চল বহু যুগ ধরে ময়ূরদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। এলাকার ইতিহাস বলছে, একদা রাজহাটের জমিদার শখে ময়ূর পুষতেন। সেখান থেকেই স্থানীয় বনাঞ্চল ময়ূরের বাসস্থান হয়ে ওঠে। এখানকার গান্ধীগ্রাম, পুরুষোত্তমবাটী-সহ আশপাশের কয়েকটি সবুজে ঘেরা অঞ্চলেই মূলত ময়ূরের অবাধ বিচরণ। বনাঞ্চলেই মেলে খাবার। গ্রামবাসীরাও বাড়ির কাছে ময়ূরের খাবার ছড়িয়ে রাখেন। ফলে, গ্রামগুলিতে মুক্ত পরিবেশে ময়ূর দেখতে বাইরে থেকে সারা বছরই বহু মানুষ আসেন। কিন্তু গত এক দশকে বেশির ভাগ এলাকায় নানা কারণে ময়ূর কমছে বলে গ্রামবাসীদের আক্ষেপ।

পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস, খেতে কীটনাশক ও মারণ ফাঁদের (ফাঁদি জাল) ব্যবহার, আবহাওয়ার পরিবর্তন— এমনই নানা কারণে রাজহাটের ময়ূরের অস্তিত্ব অনেক দিন ধরেই সঙ্কটে। তাদের সংখ্যা কমছে। সম্প্রতি অস্বাভাবিক ভাবে মৃত একাধিক ময়ূরের দেহের ময়না-তদন্তে পেট থেকে বের হয়েছে বিষধর কালাচ সাপও। সব কিছুর সঙ্গে যোগ হয়েছে অত্যধিক গরম। জলাশয়ে জলের অভাবে ময়ূরের ‘সান-স্ট্রোক’ হওয়ার প্রমাণও মিলেছে।

গ্রামবাসীদের দাবি, এই অঞ্চলে জাতীয় পাখির মৃত্যুর হার ক্রমশ বাড়ছে। ফলে, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অচিরেই রাজহাটের বুক থেকে ময়ূর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ময়ূর রক্ষায় এ পর্যন্ত সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ তাঁদের চোখে পড়েনি। মঙ্গলবার এখানে একটি কর্মসূচিতে এসে সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ময়ূর রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন।

জীববৈচিত্র নিয়ে কাজ করা ব্যান্ডেলের পশুপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিংহের খেদ, ‘‘রাজহাটে আম, জাম, লিচুর ফলন বৃদ্ধিতে ব্যাপক হারে কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কীট-পতঙ্গ তো মরছেই, ময়ূরেরও জীবন সংশয় হচ্ছে।’’ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য সন্দীপ সিংহের অভিযোগ, নিয়মের তোয়াক্কা না ছোট ছোট কারখানা তৈরির পাশাপাশি গজিয়ে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গল। ভয়ে অনেক ময়ূর অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে।’’ গান্ধীগ্রামের স্কুল শিক্ষিকা অর্পিতা কল্যা বটব্যাল বলেন, ‘‘একসময়ে রাজহাটকে ঘিরে দিল্লি রোডের পশ্চিম পাড়েই ছিল ময়ূরের বাস। কিন্তু এখন বাঁচার তাগিদে পূর্ব পাড়েও চলে যাচ্ছে ওরা। অনেচা পরিবেশে বিপদেও পড়ছে।’’

দেবানন্দপুরের পশুপ্রেমী অনিরুদ্ধ মণ্ডল ওরফে বিট্টু বলেন, "গ্রামবাসীদের একাংশ ঘটি-বাটিতে ময়ূরের জন্য জল রাখছেন ঠিকই, আরও অনেকের এগিয়ে আসা উচিত। এখন থেকেই কৃত্রিম ভাবে জলের জোগান না দিতে পারলে পাখিগুলিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Peacock

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy