ধৃত: পুলিশের জালে দিলীপ প্রসাদ। নিজস্ব চিত্র।
মুক্তিপণ আদায়ের জন্য এক যুবককে তাঁরই পরিচিত কয়েক জন অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ। তবে, শেষরক্ষা হল না। মুক্তিপণ আদায় করতে এবং অপহৃতকে বাড়ি পৌঁছে দিতে এসে এক জন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল। শনিবার বাঁশবেড়িয়ার ঘটনা। ধৃত দিলীপ প্রসাদ উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরের বাসিন্দা। রবিবার চুঁচুড়া আদালত তাকে চার দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
অপহৃত সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি বাঁশবেড়িয়া শহরের বসু লেনে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, দিলীপ তাঁকে স্কুটারে বাড়ি পৌঁছে দিতে আসে। হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব দিক খোলা রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনায় যুক্ত বাকিদের খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার সকালে মা কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌগত স্থানীয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় সৌগতর মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি মাকে জানান, বন্ধু ফোন করেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করে ঘণ্টাখানেক পরে ফিরবেন। কৃষ্ণাদেবী বাড়ি চলে যান। বিকেলে ফোনে সৌগত জানান, মগরার মিঠাপুকুরে ওই বন্ধুর সঙ্গে আছেন। ফিরতে দেরি হবে।
কৃষ্ণাদেবীর অভিযোগ, সন্ধ্যায় সৌগতর মোবাইল থেকে এক জন হিন্দিতে অপহরণের কথা জানিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশে জানালে ফল ভাল হবে না বলে শাসায়। উদ্বেগে পড়ে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। তবে, তারা পুলিশেই ভরসা রাখে। শুক্রবার সকালে কৃষ্ণাদেবী মগরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে।
তদন্তকারীদের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষ্ণাদেবী মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষি চালিয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা কম করে একশো বার ফোন করেছে। পুলিশের কথা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দিইনি।’’ শেষে এক লক্ষ টাকায় রফা হয়। শনিবার বিকেলে টাকা নিয়ে কৃষ্ণাদেবীকে মগরার বোড়োপাড়া মোড়ে আসতে বলে অপহরণকারীরা।
কৃষ্ণাদেবী টোটো চেপে টাকা নিয়ে সেখানে যান। ওসি সুব্রত দাসের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের পুলিশ গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখে। এক সময় অপহরণকারীরা একাধিকবার স্থান বদল করতে বলে কৃষ্ণাদেবীকে। শেষে পুলিশের পরামর্শে কৃষ্ণাদেবী অপহরণকারীদের জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তাঁর বাড়ি থেকে যেন টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কৃষ্ণাদেবী বাড়ি ফিরে আসেন। পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলে। রাত এগারোটা নাগাদ সৌগতকে স্কুটারে চাপিয়ে দিলীপ পৌঁছতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। স্কুটারটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণাদেবীর থেকে তাঁর সঙ্গে অপহরণকারীদের কথোপকথন জানার পাশাপাশি সৌগতর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের মাধ্যমে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছিল। মোবাইল ফোনটি তদন্তের জন্য নিয়েছে পুলিশ। কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে-বৌমা আর পাঁচ বছরের নাতনিকে নিয়ে থাকি। খুব উদ্বেগে পড়েছিলাম। ভাগ্যিস পুলিশকে জানিয়েছিলাম।’’
কেন অপহরণ?
সৌগত পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে কয়েক জন পরিচিতের সঙ্গে তিনি ঋণের কারবার করতেন। তাতে কিছু ধারবাকি হয়েছিল। ওই পরিচিতরা তাদের লোকসান পূরণের জন্যই মুক্তিপণ আদায় করতে অপহরণ করে। অপহরণকারীরা কোমরের বেল্ট, লাঠি দিয়ে তাঁকে মারধর করে এবং বন্দুক দেখায় বলেও সৌগতর অভিযোগ। ধৃত যুবককে তিনি আগে থেকে চিনতেন। তবে, কোন সূত্রে চিনতেন, তা খোলসা করেননি। পুলিশ জানিয়েছে, সব পক্ষের বক্তব্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy